শিরোনাম
  • সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য বিনষ্ট করতে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী চক্রান্ত চালাচ্ছে : ধর্ম উপদেষ্টা ন্যূনতম সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত : ডা. শফিকুর রহমান ইসকন নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারে কোনো আলাপ হয়নি : রিজওয়ানা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘেঁষে শাহবাগ থানার নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার একনেকে ৫ হাজার ৯১৫.৯৯ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ৫টি প্রকল্পের অনুমোদন কোন পত্রিকা বন্ধে চাপ প্রয়োগ সহ্য করা হবে না : নাহিদ ইসলাম আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না : তারেক রহমান বাংলাদেশ ব্যাপক শ্রম সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ড. ইউনূস কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ৩২৩ কেজি বর্জ্য অপসারণ রাজবাড়ীতে গড়াই নদীর খেয়াঘাটের ইজারাদারকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ
  • ২৮ বছর পরেও আমাদের জীবনে আব্বার অভাব অনুভব করি: জালাল আহমেদ

    জাগো কণ্ঠ ডেস্ক

    ২ নভেম্বর, ২০২৪ ০৪:৩০ অপরাহ্ন

    ২৮ বছর পরেও আমাদের জীবনে আব্বার অভাব অনুভব করি: জালাল আহমেদ

    বাবার প্রতি ভালবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান জালাল আহমেদ। ২৮ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে পিতাকে স্মরণ করে নিজের ফেসবুক পেজে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এই অনুভূতি প্রকাশ করেন। ফেসবুক পেজে তিনি লেখেন-

     

    "আমার বাবা বাসতো ভালো আমাকে
    আমার ময়লা জামাকে,
    শোনো বলি চুপি চুপি
    আমার উলের রঙিন টুপি
    দিতো মাথায় ফাঁক পেলেই,
    হাসতো তখন দাঁত মেলেই।
    আসতো চিঠি মুক্তো হাতের
    আসতো হাসি জ্যোৎস্না রাতের
    সব মেলেই।
    আমার বাবা বাসতো ভালো দেশটাকে,
    শ্যামল পরিবেশটাকে,
    সবার চেয়ে প্রিয় ছিলো তাহার
    টেবুল বোঝাই মুখরোচক আহার।" 

    "রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা"

     

    আমার আব্বা, আমরা আব্বা বলেই ডাকতাম, মোঃ আব্দুর রহমান, ইন্তেকাল করেন ২ নভেম্বর ১৯৯৬, আজ থেকে ২৮ বছর আগে। ১৯৫৯ সালে বিএ পাশ করার পর তিনি কিছুদিন সরকারি চাকুরী করার পর এলএলবি পাস করে ১৯৬৮ সালে আইন পেশায় চলে আসেন। এরপর আবার  ১৯৮৩ সালের বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা পাশ করে তিনি কিছুদিন ম্যাজিস্ট্রেসী করেছেন, প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন নোয়াখালীতে। আমরা পিতা-পুত্র ১৯ জুন ১৯৮৩ তারিখে একইদিনে   সিভিল সার্ভিস এ যোগদান করি। ১৯৮৪ সালে আব্বা যখন রাংগামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার  উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন তখন আমি খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট।  

    আমার বাবা চাচারা ছিলেন সেলফ মেইড পারসন। ১৯৩৬ সালে উনারা পিতৃহীন হন। ১৯৬১ সালের মুসলিম ফ্যামিলী ল অরডিন্যনাস এর আগে উত্তরাধিকার এর ক্ষেত্রে শরিয়া আইনের কারনে দাদার জীবিতাবস্থায় পিতৃহীন অনাথেরা দাদার সম্পত্তির বৈধ অধিকারী ছিলেন না। ফলে দাদী তাঁর সন্তানদের নিয়ে পিত্রালয়ে ফিরে যান যদিও পরে স্বামীর ভিটায় ফিরে আসেন আর সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে চিরশয্যায় শায়িত হন।  এর পর তিন ভাই নিজ চেষ্টায় প্রথমে মাদ্রাসা ও পরে স্কুলে পড়া শুরু করেন। আমার আব্বা মোঃ আব্দুর রহমান ১৯০৬ সালে স্থাপিত হবিগঞ্জ জেকে এন্ড এইচকে স্কুলে ক্লাস ফাইভ, শায়েস্তাগঞ্জ স্কুলে ক্লাস সিক্স পড়েন। ক্লাস সেভেনে উঠে তিনি নাইনে ভর্তি হবার জন্য শায়েস্তাগঞ্জ স্কুল ছাড়েন। কালিকাপুর হাইস্কুল রাজী না হলে ১৯২৪ সালে স্থাপিত জগদীশপুর জেসি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেনীতে ভর্তি হন। ঐ স্কুল থেকে ১৯৫৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর সিলেটে চলে যান। সেখানে শেখ ঘাটে বিখ্যাত এহিয়া ভিলায় থেকে  মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজ থেকে ১৯৫৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এর পর প্রায় দুই বছর চাকুরী করেছেন সহকারী তহসিলদার এর। ১৯৫৮ সালে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে ডিগ্রী পড়াকালে কলেজ ছাত্র সংসদ এর নির্বাচিত সহসভাপতি ছিলেন। চাকুরী করেছেন চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগে, তখনকার কম্যুনিকেশন এন্ড বিল্ডিং দপ্তরে  ( সি এন্ড বি), ক্যাশিয়ার পদে। সেখানে ল পড়েছেন নৈশ কলেজে, তারপর সরকারি চাকুরী ছেড়ে আইন পেশায় যোগ দিয়েছেন। ১৯৮৩ সালে বিশেষ বিসিএস ১৯৮২ তে উত্তীর্ণ হয়ে আমরা বাবা- ছেলে এক সংগে সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়েছি। ১৯৮৪ সালে রাংগামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলায়  ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম শ্রেণী ও উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট থাকা অবস্থায় পুনরায় সরকারি চাকুরী ছেড়ে আইন পেশায় ফিরে আসেন আমাদের ৮ ভাইবোনের জীবন গড়ে দিয়েছেন তিনি। এখন ভাবতেও পারিনা ঐ সময়েও কতটুকু স্বাধীনতা দিয়েছেন আমাদের। ১৯৭৬ সালে আমার এসএসসি পরীক্ষার পর আমি এখনকার ১৮টি জেলায় বেড়াতে পেরেছি এই স্বাধীনতায়। খেতে পছন্দ করতেন, খাওয়াতে ও, রিচ ফুড নয়, সাধারণ দেশি খাবার। কখনো দিনে দু'বার ও বাজার করতেন। আমাদের বাসায় তখনো এবং এখনো আত্মীয় স্বজনের সবাই স্বাগত। তিনি আজীবন পেশাগত ও  আর্থিক সততার সংগে জীবন যাপন করেছেন। পরহেজগার ছিলেন সবসময় কিন্তু রক্ষনশীল বা কূপমণ্ডূক ছিলেন না।  অনুসরণযোগ্য মানুষ ছিলেন, কখনো কারো ক্ষতি চিন্তা করেন নি, সারাজীবন মানুষের উপকার করেছেন ও সৎ পরামর্শ দিয়েছেন। প্রচুর পড়াশোনা করতেন। আমরা এখনো বাবার ছেলে হিসেবে  নিজ জেলায় মানুষের সম্মান ও স্নেহ পেয়ে থাকি। 

     আব্বা মৃত্যবরণ করেছেন ১৯৯৬ সালের ২ নভেম্বর  মাত্র ৬৫ বছর বয়সে। ২৮ বছর পরেও আমাদের জীবনে আব্বার অভাব অনুভব করি। আম্মা এখনো আছেন আমাদের মাঝে।

    "রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা "! আমাদের ছোটবেলায় আব্বা যেমন আমাদের স্নেহের ছায়াতলে যত্নে রেখেছেন মহান আল্লাহপাক যেন আব্বাকে ও তেমনই তাঁর  রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় প্রদান করেন।

     মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন আব্বাকে জান্নাতবাসী করুন আর আম্মাকে সুস্থ রাখুন এই দোয়া করি।




    সাতদিনের সেরা খবর

    বিবিধ - এর আরো খবর