শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনার নেই। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করতে পারছেন না। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২১ ফেব্রুয়ারিতে কলাগাছ, কাপড় ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে জানানো হয় শ্রদ্ধা। এতে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও শহীদদের ভুলতে বসেছে নতুন প্রজন্ম। এছাড়া শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শিক্ষার্থীদের যেতে হয় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে। এদিকে ৫ বছর আগে নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থিত শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলা হয়।এরপর অস্থায়ী শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কিন্তু উপজেলা পরিষদ চত্বরে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণে আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে- ২২৫ বর্গ কিলোমিটর আয়তনের প্রায় ৮ লাখ জনসংখ্যা বিশিষ্ট শিবগঞ্জ উপজেলা।১৫টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা, ১৮টি কলেজ, ৭৯টি উচ্চ বিদ্যালয়, ২৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি স্থলবন্দরসহ সহ¯্রাধিক বিভিন্ন ধরণের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ৮-১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১টি ইউনিয়ন পরিষদ ও সোনামসজিদে একটিসহ মোট ১২টি শহীদ মিনার রয়েছে। স্কুল-কলেজ মিলিয়ে প্রায় ৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আজও বুঝে না যে শহীদ মিনার কি!। এছাড়া বৃহত্তর দিয়াড় এলাকার প্রায় ৫টি ইউনিয়নে জাতীয় দিবস সম্পর্কে একেবারেই অন্ধকারে আছে। যদিও স্থানীয় প্রশাসন কয়েকবার প্রতিশ্রুতিও দিয়েও সুরাহা মেলেনি।
সূত্র জানায়, ৫ বছর আগে নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদ চত্বরে নির্মিত শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়েছিল। তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী রওশন ইসলাম বলেছিলেন, শহীদ মিনার নির্মাণের নকশা তৈরি হয়েছে। শিগগির কাজ শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি।এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মুরশিদুল আলম জানান, উপজেলায় প্রায় ১০- ১২টি উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। আগামীকাল জাতীয় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযথ পালন করার জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই তার তালিকা চাওয়া হয়েছে। শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তার চাওয়া হয়েছে। আশা করছি শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মানের ব্যবস্থা নিবেন।
উপজেলা নির্বাহী আবুল হায়াত জানান, উপজেলা পরিষদ চত্বরে শহীদ মিনার নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আগামী ছয় মাসের মধ্যে উপজেলা চত্বরে শহীদ মিনার নির্মান করা হবে ইনশাল্লাহ। বাকী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠাতে শহীদমিনার নির্মানের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য আলোচনা করে পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনার নির্মাণে ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, উপজেলা পরিষদ চত্বরে শহীদ মিনার নির্মাণের বিষয়ে ইতোমধ্যে বিশেষ সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।