জোড়া শিশু লাবিবা-লামিসাকে আলাদা করার জন্য আজ সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। প্রথমধাপের অস্ত্রপাচার সফল হলেও ঝুঁকি এড়াতে এদিন আলাদা করা হয়নি। ৬ সপ্তাহ পর দ্বিতীয়ধাপের অপারেশনে তাদের আলাদা করার কাজ সফল হবে বলে আশা করছেন চিকিৎকরা।
ঢামেক শিশু পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফ উল হক কাজলের অধীনে ভর্তি রয়েছে এই জোড়া শিশু।
অপারেশনের বিষয়ে তিনি দৈনিক জাগো কণ্ঠকে বলেন, অপারেশনটা দুই ধাপে করতে হবে। প্রথব পর্ব হয়েছে। এসময় পুরোপুরি আলাদা করা যায়নি। আজ আমরা সেপারেশন করিনি। ৬ সপ্তাহ পর ইনশাআল্লাহ করা যাবে। তারা এখন আইসিইউতে আছে। মঙ্গলবার সকালে তাদেরকে কেবিনে আনা হবে।
তিনি বলেন, প্রথমপর্বের অপারেশনে টিস্যু সম্প্রসারণের জন্য চামড়ার নিচে বল রেখে আসা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে স্যালাইন পুশ করে ওটাকে বড় করা হবে। বড় করলে চামড়া ও টিস্যুগুলোর আকৃতিটা বাড়বে। এতে যখন সেপারেশন হবে তখন ওটা দিয়ে কাভার করতে সুবিধা হবে। সেক্ষেত্রে শতভাগ সফলতার সম্ভাবনা আছে।
ডা. কাজল আরও জানান, আজ সেপারেশন করলে ঝুঁকি ছিল, বিশেষ করে লামিসার জন্য বেশি ঝুঁকি ছিল।
সূত্র জানায়, সোমবার সকাল ৮টার দিকে জোড়া শিশু লাবিবা-লামিসাকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচার শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে।
প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার শেষে দুপুর ১টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। তাৎক্ষনিকভাবে তারা জানান, ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর আবার অস্ত্রোপচার করা হবে। লামিসা নামের শিশুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকার কারণে আজ তাদের আলাদা করা সম্ভব হয়নি।
আজ ৩২ জন চিকিৎসক অস্ত্রোপচারে ছিলেন জানিয়ে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফ উল হক বলেন, 'ঝুঁকি এড়াতে আরেকটি ধাপে তাদেরকে সম্পূর্ণ আলাদা করা হবে। শিশু দুটির যোনিদার ও মলদ্বার খুবই কাছাকাছি। লামিসার জন্য এটা ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে একটি শিশুকে ক্ষতি না করে আরেকটি শিশুকে সুস্থ করা যাবে না। আজকে যদি আলাদা করা হতো তাহলে লামিসার যৌনাঙ্গ রাখতে পারতাম না। আমরা চাই ২ জনকেই পুর্ণাঙ্গ নারী হিসেবে দেখতে।'
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, বিষয়টি ক্রিটিক্যাল। এ ক্ষেত্রে নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে চমৎকারভাবে কাজ করছেন চিকিৎসকরা। শিশুদের আলাদা করতে কয়েক সপ্তাহ লাগবে। এর বাবদ সব খরচ হাসপাতাল থেকে বহন করা হচ্ছে।
জোড়া শিশু লাবিবা-লামিসার বাবা লাল মিয়া দিনমজুর। লাবিবা-লামিসার মা মনুসা বেগম বলেন, আমি যখন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন আল্ট্রাসনোগ্রাফি করলে জানতে পারি আমার জমজ বাচ্চা হবে। কিন্তু এভাবে তারা জোড়া লেগে আছে তা জানতে পারিনি। জন্মের পর দেখা যায় এই অবস্থা। রংপুর মেডিকেলে গেলে তারা ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেন।
তিনি আরও বলেন, ৯ দিন বয়সে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। তারা চিকিৎসা দেন এবং জানান ১ বছর বয়স হলে তারপর আলাদা করার চেষ্টা করবেন। করোনার কারণে দেরি হয়ে গেল। আজ অপারেশন হলো। ২ মেয়ে যেন সুস্থ থাকে তার জন্য সবার কাছে দোয়া চান লাল মিয়া ও মনুসা বেগম।
এর আগে আজ অপারেশনের বিষয়টি গত শনিবার (১১ ডিসেম্বর) ঢামেক হাসপাতালের সভাকক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল উল হক কাজল। তার অধীনেই গত ৫০ দিন ধরে ওই দুই শিশু ভর্তি আছে বলে জানান তিনি। এর আগেও কয়েকবার তারা ভর্তি ছিল।
ডা. আশরাফুল উল হক কাজল বলেন, লাবিবা ও লামিসার বয়স আড়াই বছর। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল তাদের জন্ম হয়। জন্মগতভাবে তারা জোড়া লাগানো। আমাদের এখানে ৫০ দিন হলো ভর্তি হয়েছে। করোনার কারণে আমরা তাদের অস্ত্রোপচার করতে পারিনি। আগামী সোমবার তাদের অস্ত্রোপচার করা হবে। এ অপারেশন করতে ১২-১৩ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। এ সময় ২টি অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত রাখা হবে। এ অপারেশনে ৩০-৩৫ জন চিকিৎসক উপস্থিত থাকবেন। আমরা আশাবাদী একটি সফল অপারেশন হবে। এটি আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও জানান, তাদের দুজনের মলদ্বার একটি। বাইপাস সার্জারির মাধ্যমে পৃথক মলদ্বার তৈরি করা হয়েছে। এই ২ শিশুর জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডে পেডিয়াট্রিক সার্জারি, নিউরো সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক্স, রেডিওলজি, ইউরোলজি, অর্থোপেডিক, সার্জারি ও অ্যানেসথিওলোজির চিকিৎসক আছেন।
ডা. আশরাফুল আরও জানান, এই পরিবারটি অনেক গরিব। এটা অনেক ব্যয়বহুল চিকিৎসা; তবে এটা আমরা ফ্রি করব। শিশুটির বাবা দিনমজুর। তাদের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়।