আমরা মাছে- ভাতে বাঙালি। দিনে দিনে কমছে নদী- খাল- জলাশয় ও বিল। যেসব নদী বা খাল রয়েছে তাও আবার বিভিন্ন বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে, যার ফলে এখন বিলুপ্তের পথে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
এক সময় পত্নীতলা উপজেলার বিভিন্ন খাল- বিল, পুকুর- জলাশয় ও নদী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু প্রাকৃতিক আবাসভূমি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। বিলুপ্তের ঝুকিতে থাকা এসব মাছের অব্জল ভেদে বিভিন্ন নাম রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চাঁদা, নামা চাঁদা, গোল চাঁদা, আইড়, শুলশা, পাবদা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, বাইলা, ভেদা, মাগুর, বোয়াল, শিং, কৈ, টাকি, শোল, ফলি, চেলা, মলা, ঢেরা, ছোট টেংরা, বড় টেংরা, চান্দা, চ্যাং, ছোট চিংড়ি, বাতাশি,দেশি জাতের পটকা, বেলেসহ নাম না জানা আরো বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
এক সময় দেশি জাতের এসব ছোট মাছের উৎস ছিলো খাল- বিল, পুকুর-জলাশয় ও বিভিন্ন নদী- নালা। পত্নীতলা উপজেলার বড় বিল,বেকি বিল, বুড়িদহ বিল, ঘুকসি বিল, সাত বিলা বিল ও উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই নদী থেকে এক দশক আগেও প্রতিদিন উপজেলার নজিপুর মাছ বাজারসহ বিভিন্ন হাট- বাজারে দেশি জাতের পর্যাপ্ত ছোট মাছ আসতো। উপজেলার বড় বিল,বেকি বিল, বুড়িদহ বিল, ঘুকসি বিল, সাত বিলা বিল ও আত্রাই নদী দখল আর দূষণের কবলে পড়ে অস্বিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। চাহিদা থাকার সত্বেও ক্রেতারা এখন এ জাতীয় মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পত্নীতলা উপজেলার প্রবীন গন্যমান্য ব্যক্তিরা বলেন, এখন তো দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়না বললেই চলে। এখন পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া,সরপুঁটি, কৈ, মাগুর, শিং,পাবদা ইত্যাদি প্রজাতির মাছ চাষ করা হচ্ছে। এতে দেশে মাছের চাহিদা হয়তো বা পূরণ হচ্ছে কিন্তু দেশীয় মাছের যে স্বাদ ও পুষ্টি তা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। অথচ এক দশক আগেই কোন রকম চাষ ছাড়াই আমাদের গ্রামাঞ্চলে এক সময় প্রচুর পরিমানে দেশীয় জাতের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। বাজারগুলোও ভরে যেতো দেশি মাছে যা খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যেতো। খাল- বিল, জলাশয়ের অধিকাংশ এলাকায় নতুন নতুন ঘর- বাড়ি গড়ে উঠায় জলাশয় ও খাল- বিলের অস্বিত্ব নেই।
তারা আরো জানান, তাছাড়া ছোট জাতের মাছের সরবরাহ অনেক হ্রাস পেয়েছে। দুটি কারণে ছোট মাছের চালান কমে গেছে। প্রথমত ছোট মাছের উৎপাদন কমে যাওয়া দ্বিতীয়ত বেড়ে গেছে স্থানীয় চাহিদা।
এ বিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মো: আবু সাঈদ বলেন, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই দেশি জাতীয় অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়েছে। বিলুপ্তের পথে রয়েছে বহু প্রজাতির মাছ। প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জলাভূমির সঙ্গে বিশেষ করে বিল ও নদীর গভীরতা কমে যাওয়া, বিল ও নদীতে বছরের অধিকাংশ সময় পানি না থাকা এবং প্রজনন মৌসুমে পানি প্রবাহ কমে যাওয়া। মনুস্যসৃষ্ট কারণগুরোর মধ্যে রয়েছে জমিতে রাসায়নিক সার ও অপরিকল্পিত মৎস আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজনন সক্ষম মাছ ও পোনা ধরা, কারেন্ট জালের ব্যবহার, চায়না জালের ব্যবহার, মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করা এবং ক্ষতিকর মৎস আহরণ সরঞ্জামের ব্যবহার।
তিনি আরো বলেন, আমরা বিভিন্ন যুগোপযোগী পদ্ধতির মাধ্যমে দেশীয় মিঠা পানিতে মাছের যত্নের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। দেশীয় মাছ আমাদের দেশের সম্পদ তা রক্ষা করতে আমরা বিভিন্ন সময়ে জনসচেতনতা মূলক বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকি।