তৃতীয় লিঙ্গের একজন প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচিত হচ্ছে। গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন নজরুল ইসলাম ঋতু। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৬নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন তিনি।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ঋতুকে নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের এই প্রার্থীর জয়ে নিজ গ্রাম দাদপুরের মানুষ অনেক খুশি। নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে নজরুল ইসলাম ঋতু এলাকার উন্নয়নে নানা প্রত্যাশার কথা জানাচ্ছেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, আমার স্বামী-স্ত্রী, সন্তানাদি নেই। জনগণই আমার সব। সামনের দিনগুলোতে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ আমার পিছনে ছিল বলেই নির্বাচিত হয়েছি। মানুষ আমাকে ভালোবেসে ভোটে দাঁড় করিয়েছিল।মানুষের ভালোবাসায় আমি বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে তৃতীয় লিঙ্গের ঋতু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাদের স্বীকৃতি না দিতো তাহলে ভোটে দাঁড়াতে পারতাম না। আমি ইউনিয়নবাসীর জন্য অনেক কিছু করতে চাই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি ছাড়া সেটি সম্ভব না।
ইউনিয়ন পরিষদ ভবন
নবনির্বাচিত এই চেয়ারম্যান বলেন, ভোটের আগে দলাদলি ছিল। ভোটের পর কোনো দল নেই। সবকিছু ভুলে গিয়ে একসঙ্গে কাজ করব। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলই এখানে আছে। কিন্তু এখন কোনো দল বুঝি না। জনগণ ভোট দিয়েছে এখন আমরা সবাই একই দল।
তিনি বলেন, অনেক ত্যাগী আওয়ামী লীগ কর্মী আছে যাদের কোনো খোঁজ নেওয়া হয় না। আমি ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি নতুনভাবে পথচলা শুরু করতে চাই।
নজরুল ইসলাম ঋতু বলেন, তার নিজের কোনো কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই। জনগণই তার সব। কারণ তার কোন ছেলে-মেয়ে বা কোনো সংসার নেই। তার কোনো লোভ-লালসা নেই। জনগণের জন্যই সবকিছু করতে চান। জনগণের সব নাগরিক সুবিধা তিনি বুঝিয়ে দিবেন বলে জানান।
ইউনিয়নবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা আছে ইউনিয়নের মধ্যে। তিনি সেগুলো দ্রুত মেরামত করার কাজ করব। বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতাসহ সরকারি সবকিছু সুষ্ঠুভাবে বন্টন করা হবে। জনগণের প্রাপ্যটুকু বুঝিয়ে দেব। জনগণের কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেব না। সব সময় সত্যের পথে থাকবো। কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিব না।
ঋতু বলেন, নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে। কোনো প্রকার মারামারি-হাঙ্গামা এই ইউনিয়নে চলবে না। দাঙ্গা-হাঙ্গামা কেউ বাঁধালে সে দলেরই হোক কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সন্ত্রাসের কোনো জায়গা ইউনিয়নে হবে না।
জানা গেছে, বিজয়ী চেয়ারম্যান ঋতু উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের সন্তান। তার আরও তিন ভাই ও তিন বোন রয়েছে। তিন ভাই ঢাকাতে থাকেন এবং বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। জন্মের পর তৃতীয় লিঙ্গ প্রকাশ পাওয়ায় ৭ বছর বয়সে তাকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকা চলে যেতে হয়। সামান্য লেখাপড়া করলেও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনো হয়নি। ছোটবেলা থেকেই ঢাকার ডেমরা থানাতে তার দলের গুরুমার কাছেই বেড়ে উঠা। এখন তার বয়স ৪৩ বছর। এলাকাবাসীর আগ্রহেই এবার ইউনিয়ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তিনি।