ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে যখন গোটা দেশ উত্তপ্ত, স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যখন নির্বিচারে গুলি করে আন্দোলন দমনের চেষ্টা চলছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে তরুণদের উৎসাহিত করেছিলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান। গত ৩ আগস্ট নিজের ফেসবুক লাইভে এসে তিনি চলমান রাজনীতিকদের ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য তরুণ প্রজন্মের কাছে দায়িত্ব দেয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। তার এই বক্তব্যের দুই দিনের মাথায় শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।
ফেসবুক লাইভে এসে আজম খান বলেছিলেন-‘মনটা খুব খারাপ। গত একটা মাস যন্ত্রণা ভোগ করছি। ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আমি ব্যর্থ রাজনীতিবিদ হিসেবে ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব নিয়ে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছিলাম। অনেক বড় বড় পদে আমি ছিলাম, রাজনৈতিক এসব পদ থেকে অবসর নিয়ে আমি আহবান জানিয়েছিলাম-আমরা রাজনীতিবিদরা এ সমাজকে কিছুই দিতে পারিনি। ৯৯ শতাংশ রাজনীতিবিদ লোভী, আমরা ভন্ড, কাজেই আমাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। আপনারা প্রবীণ রাজনীতিবিদরাও রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করে নতুন প্রজন্মের কাছে দায়িত্ব দিন। আজকে দেখেছেন-তারুণ্য কীভাবে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। অথচ আমরা তারুণ্যকে অবহেলা করেছি। আমার ছেলেকেও বকেছি, সারাদিন কম্পিউটার টিপত। আমরা বলতাম তা ডিভাইসে আসক্ত, রাজনীতি সচেতন নয়। তাদের হাতে দেশ টিকবে না। সব ভুল ভেঙে দিয়ে আমাদেরকে বিস্মিত করেছে। ওরা দেখিয়েছে, ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে দেশ বড়। এই তরুণরা আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছে। তারা রাজনীতি না বুঝলেও আমাদের বুঝিয়েছে-ভবিষ্যৎ রাজনীতিটা কি। ওরা রূপকথার গল্প শোনেনি, গল্প শুনে বড়ও হয়নি। তবু তারা রূপকথার দৈত্যকে ঠিকই চিনে রেখেছে। দেশ সুস্থ্য নেই, দেশের মানুষ ভাল নেই। এভাবে ভাল থাকা যায় না। আমাদের ব্যর্থতা-আমরা এদেশকে ওদের উপযোগী করে রাখতে পারিনি। খেলার মাঠ রাখিনি। নদী-খাল-বিল সব দখল করে প্রকৃতির ভারসাম্যকে নষ্ট করেছি। তাদেরকে বেড়ে ওঠার কোন সুযোগ আমরা রাখিনি। অথচ ওরা বড় হয়ে কোন বাধাই তাদের কাছে বাধা হয়নি।
আড়াই বছর আগে আমি জাতিকে বলেছিলাম, সমস্ত নেতাকে আহবান জানিয়েছিলাম, এ তরুণরা দেশকে সুন্দর করে গড়ে তুলবে, আমি যেভাবে অবসর নিয়েছি, আপনারাও বিএনপি-জামায়াত-আওয়ামীলীগের সব নেতা ব্যর্থ রাজনীতির দায়-দায়িত্ব নিয়ে রাজনীতি থেকে অবসর নেয়া উচিত। আজকে আরেকবার আহবান জানাচ্ছি, এখনও সময় আছে, আপনারা সব রাজনীতিবিদরা অবসরে যান, নতুন নেতৃত্বকে দেশ চালানোর সুযোগ করে দিন। তাদের মেধাকে কাজে লাগান, এদেশ সত্যি সত্যি একটা সুন্দর সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আজকে তরুণরা ঐক্যবদ্ধ করেছে, লক্ষ লক্ষ মা-বোন জনতা সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। আমার ছেলেকে ফোন করলাম-সে বলল আমিতো মিছিলে। আমি কি তাকে ঠেকাতে পারব? তারুণ্যকে কখনও ভয় দেখিয়ে ঠেকানো যায়? তাদেরকে ভালবাসতে হয়, আদর করতে হয়। আদর করে বুকে নিয়ে বুঝালে তারা বুঝবে। এছাড়া ভয় দেখিয়ে, গুলি করে কিছুই করা যায় না-এটা তরুণরা প্রমাণ করেছে। যারা বুক চেতিয়ে দেয় আবু সাঈদ, মুগ্ধর মত ছেলেরা, তাদেরকে আমরা কিভাবে আটকাবো। কাজেই আমার ছেলেকেও ফিরিয়ে আনতে পারবো না। জানি না সে লাশ হয়ে ফিরে আসবে নাকি লাশও গুম হয়ে যাবে। কাজেই আজ আবারও আহবান জানাচ্ছি-রাজনীতিবিদরা বসে সিদ্ধান্ত নিন, আমাদের রাজনীবিদদের আর রাজনীতি করার অধিকার নেই। রাজনীতিবিদরা রাষ্ট্র সংস্কার করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে গেছি। রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব এই তরুণ প্রজন্মকে দিন তাহলেই দেশ সুস্থ হবে, সুন্দর হবে, সবার ভালো হবে। সবাই সুখে থাকবে।’
আজম খানের রাইড ভিডিওটি দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।
https://www.facebook.com/share/v/AxE1jLvXzKnA1vjo/?mibextid=qi2Omg