পঞ্চম ধাপে গত বুধবার অনুষ্ঠিত দেশের ৭০৭ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও অধিকাংশ নৌকা প্রার্থী জিত পারেননি। এই ধাপে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ৫০.৭৩ শতাংশ জিততে পারেননি। আগের ধাপের চেয়েও এবার নৌকা প্রার্থীর হারের সংখ্যা বেশি।
সূত্রমতে, ৭০৭টি ইউপির মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বৃহস্পতিবার ৬৯২টির বেসরকারি ফলাফল জানায়। বাকি ১৫টি ইউপির মধ্যে ১৩টির কয়েকটি কেন্দ্রে অনিয়ম ও সহিংসতার কারণে ভোট স্থগিত আছে। একটি ইউপির সব কেন্দ্রের ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে। আর একটি ইউপির নির্বাচন আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে। ফল প্রকাশ করা ৬৯২টি ইউপির মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জিতেছেন ৩৪১টিতে, শতাংশের হিসাবে যা মোট ইউপির ৪৯.২৭ শতাংশ।
অন্যদিকে ৩৪৬টি বা ৫০.৭০ শতাংশে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন। বিএনপি এই নির্বাচনে দলের কাউকে মনোনয়ন না দেওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা বেশ কিছু ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ ছাড়া এই ধাপের নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও শিবচরের ৪৭টি ইউপিতে কোনো প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়নি। এই ইউপিগুলোতে দলের বিদ্রোহ সামাল দিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন দলের সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রের বাইরে জাতীয় পার্টি দুটি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ দুটি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি একটি ইউপিতে জয়ী হয়েছে।
সূত্রমতে, এসব ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা জিতেছেন ১৮৩টিতে। আর বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা জিতেছেন ৯৫টিতে।
এই ধাপের নির্বাচনে ভোটের আগেই একক প্রার্থী হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের ৪৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩৩ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১১২ জন একইভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা ভোটের এই ইউপিগুলোসহ নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশ করে।
আগের চার ধাপের ফল : চতুর্থ ধাপে গত ২৬ ডিসেম্বর ভোট হওয়া ৮৩৮টি ইউপির মধ্যে ৭৯৬টির বেসরকারি ফলাফল জানিয়েছিল ইসি। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিতেছেন ৩৯৬টি ইউপিতে, শতকরা হিসাবে যা মোট ইউনিয়নের ৪৯.৭৪ শতাংশ। আর ৩৯০টি বা ৪৮.৯৯ শতাংশ ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন।
চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ভোটের আগেই ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ৪৮ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ ছাড়া নারীদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১১২ জন, সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১৩৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
তৃতীয় ধাপে ভোটের আগেই ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা ১০০টি ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ ছাড়া নারীদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১৩২ এবং সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩৩৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। চট্টগ্রামের রাউজানের ১৪টি ইউপিতে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য সব কটি পদেই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতায় নির্বাচিত হন।
১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৫৮.২৭ শতাংশ জয়ী হন। বাকি প্রায় ৪২ শতাংশ ইউপিতে চেয়ারম্যান হন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ অন্যরা। দ্বিতীয় ধাপের ওই হিসাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৮১ জনও রয়েছেন। এই ধাপে জাতীয় পার্টি ১০টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চারটি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি), খেলাফত মজলিস, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা একটি করে ইউপিতে জয়ী হন।
প্রথম ধাপের দুই দফায় গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৭৩.৪৮ শতাংশ ইউপিতে জয়ী হয়েছিলেন। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৭২টিতে জয়ী হন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন ৮৮টিতে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি তিনটি, জাতীয় পার্টি (জেপি) তিনটি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীরা একটি করে ইউপিতে বিজয়ী হন।