কয়লা সংকটে বিদ্যুৎ এর উৎপাদন কমে যাওয়ায় সারাদেশেই বেড়েছে বিদ্যুতের লোডসেডিং। আর এ সংকটে আবারো সামনে এসেছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি মৎস খামারের পুকুরে সোলার প্যানেল বসিয়ে, মাছ চাষের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন এর উদ্যোক্তরা, নিজেদের ব্যবহারের পর সেই বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রীডে। একটি জেলা শহরে উদ্যোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এমন উদ্যোগ দেখাচ্ছে আশার আলো। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আতাহার এলাকায় নবাব অটো রাইস মিলের মধ্যে থাকা মৎস খামারের দুটি পুকুরে পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হয়েছে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে পুকুরের পানির উপর, প্লাস্টিকের ভাসমান কন্টেনারে বিশেষ কায়দায় বসানো হয়েছে প্রায় ১৫০০টি সোলার বিদ্যুৎ প্যানেল। পুকুরে ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের এ প্রকল্প দেশে প্রথমবারের মত করা হয়েছে বলে দাবি এর উদ্যোক্তাদের।
ভাসমান এ সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটির পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষনের দ্বায়িত্বে থাকা বেসরকারি বিদ্যৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান জুলস পাওয়ার লিমিটেডের প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, চলতি মাসের শুরুতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে এ প্রকল্প থেকে। দুই দশমিক ৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রকল্প থেকে থেকে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ১ দশমিক ৮ মেগাওয়াট। যা ব্যবহার হচ্ছে নবাব অটো রাইস মিল সহ নবাবগ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। ব্যবহারের পর বিদ্যুৎ অবশিষ্ট থাকলে তা চলে যাচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। যা মাস শেষে নেট মিটারিং এর মাধ্যমে নেসকো বিল পরিশোধ করবে। সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের এ কার্যক্রমে মাছের উৎপাদনে কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে কিনা, সেটি এখন পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। নবাব অটো রাইস মিলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল মমিন জানান, এখন পর্যন্ত মাছের উৎপাদনে কোন ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হয়নি তাদের কাছে। মাছ ধরতেও তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। যেভাবে প্যানেল গুলো স্থাপন করা হয়েছে তাতে সমস্যা হবে না বলেই আমরা আশা করি।চালকল ব্যবসা দিয়ে হওয়া নবাব গ্রুপ এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জে অন্যতম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। নবাব গ্রুপের কর্ণধর আকবর হোসেন জানান, পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পটি তারা আগামীতে আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন।
তিনি বলেন, সরকারি ভাবে যদি এ কাজে উদ্যোক্তাদের কিছুটা সহযোগিতা করা হয়, তাহলে আমার মত অনেকেই এমন উদ্যোগ নিবেন। তার মতে সৌর বিদ্যুৎ সেক্টরে বিনিয়োগের সুযোগ আছে, জেলা শহরের কয়েকটি ব্যবসায়িক গ্রুপ এমন উদ্যোগ নিলে, একটা জেলার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অনেকটায় স্বাভাবিক ও লোডসেডিং মুক্ত রাখা সম্ভব। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যুৎ বিতরনের দ্বায়িত্বে থাকা নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল আজিম জানান, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের মোট ব্যবহৃত বিদ্যুৎ এর অন্তত ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য বিদ্যুৎ বিভাগের। সেই দিক মাথায় রেখে গ্রাহক পর্যায়ে সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়াতে তারা উৎসাহিত করছেন। নবাব অটো রাইস মিলের মত অন্য ৫-৬ জন উদ্যোক্তা এগিয়ে আসলে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে লোডসেডিং মুক্ত রাখাও সম্ভব বলে জানান।