শিবগঞ্জের এক সময়ের প্রবল খরস্রোতা চকের নদী এখন কেবল কালের স্বাক্ষী। নদীর বুক জুড়ে এখন ধান সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। যা শুধু নদীর নমুনা বহন করে কিন্তু নদী নেই। এ নদীটি ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা,বিনোদপুর, দূর্লভপুর ইউনিয়ন জুড়ে। বর্তমানে শুধু ফসল আর ফসল। নদীর তীরবর্তী এলাকার বয়োজৈষ্ঠ কয়েকজন ব্যক্তির সাথে আলোচনা করে জানা গেছে এ নদীটি প্রায় দুই শত বছর আগের। এ নদীটি ঘিরে বিনোদপুর ইউনিয়নের চৌকা বিওপি, মনাকষা ইউনিয়নের মনাকষা হাট, হুমায়ুন রেজা উচ্চ বিদ্যালয়, মনকষা শ্মশান, আদিনা সরকারী কলেজ, মনাকষা বিওপি, দাদনচক হাট,দাদনচক পিটিআই, নীলকুঠির কারখানা দূর্লভপুর ইউনিয়নের হিন্দু সম্প্রদায়ের জেলার বৃহত্তম তর্তীপুরশ্মশান তর্তীপুর মেলা,তর্তীপুর ঘাটসহ ছোট বড় বিভিন্ন ধরে নর শতাধিক গড়ে উঠেছে। এ নদীর তীরে ঘেঁষে মনাকষা ইউনিয়নের খড়িয়ার ও পারচৌকা গ্রামের সামনে বৃটিশ সরকার এক সময় বিরাট এলাকা জুড়ে নীল কুঠি তৈরী করে এলাকার হাজার হাজার কৃষককে বিনা পারিশ্রমিকে নীল চাষে বাধ্য করেছিল।নীল চাষে কৃষকরা অনাগ্রহ দেখালে সহ্য করতে হতো কঠিন নির্যাতন। এমনকি কথিত আছে যে একজন কৃষক নীল চাষে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে হত্যা করে তার লাশ গাছে ঝুলিয়ে রেখেছিল।
সরজমিনে ঘুরে এলাকার অনেক বয়োজৈষ্ঠরা জানান,এ চকের নদী দিয়ে আগে বড় বড় নৌকায় ছিল একমাত্র যানবাহন। ৫শ মনী নৌকা যোগে দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসা করতে আসতো বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ী। এ চকের নদীর তীর ঘেঁষে হিন্দুদের তীর্থ স্থান গঙ্গা স্নানের স্থান তর্তীপুর ঘাট। এখানে প ্রতিবছরই উত্তর বঙ্গের হাজার হাজার হিন্দু ধর্মাবম্বীরা গঙ্গা স্নান করতে আসে। সেদিন বড় ধরনের মেলাও বসে। এখানে।বিজ্ঞ-ব্যক্তিরা জানান প্রায় ৩০ কিলোমিটর দীর্ঘ এ নদীটি চৌকা বিওপির অধীনস্ত সীমান্ত এলাকা হয়ে ভারত থেকে বয়ে এসে তর্তীপুর ঘাট পার হয়ে মহান্দা নদীতে মিশেছে।এ নদীর উপর দিয়ে বর্তমানে ৫/৬টি ব্রীজ রয়েছে। যে ব্রীজ গুলোর তলা জুড়ে এখন ভ’মি দস্যুরা দখল করে ফসল উৎপাদন করছে।
প্রবীন জেলেদের ভাষ্য অনুযায়ী এ নদী যখন প্রবাহমান ছিল,তখন হাজার হাজার জেলা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। অনেকে শুধু নৌকা বেয়েই জীবনজীবিকা নির্বাহ করতো । এখন এগুলো শুধু কাল্পনিক কাহিনী। কারণ বর্তমানে নদীর নমুনা কিছুই নেই। দেশ স্বাধীনের পর পরই ১৯৭২সালে ভূমি রের্কডের সময় এ নদীর হাজার হাজার একর জমি মুক্তিযোদ্ধা চলাকালীন সময়ে স্বাধীনতার বিরোধীরই নিজ নামে রের্কড করিয়ে নেই এবং ধীরে ধীরে দখল করে কিছু হস্তান্তর করে এবং কিছু নিজের নামে রেখে আবাদ করে খাচ্ছে।
এব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) জোবায়ের হোসেন বলেন, বর্তমানে খাস ও নদীর জমি দখল মুক্ত করার কাজ চলছে। বেশ কিছু খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের অভিযান চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে সবগুলো খাস জমি ও নদীর জমি দখল মুক্ত করে সরাকারের নিয়ন্ত্রণে এনে জনস্বার্থে ব্যবহার করা হবে।