রাজবাড়ীর গোয়লন্দ থেকে পাবনার পাকশি পর্যন্ত পদ্মা নদীর বালুমহাল ইজারা ও বালু মহাল থেকে বাণিজ্যিক বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জনস্বার্থের এক রিটে সম্পূরক আবেদনের শুনানির পর বুধবার (২৯ মার্চ) রুলসহ এ আদেশ দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল জলিলের দ্বৈত বেঞ্চ।
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারি ও ঝুঁকিপূর্ণ মালামাল পরিবহন নিরাপদ করতে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে পাবনার পাকশী পর্যন্ত পদ্মার বিভিন্ন অংশে বাল্কহেড বা বাংলা ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং বাণিজ্যিভাবে বালু উত্তোলন ও বালুমহালের ইজারা বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রীয়তা কেন অবৈধ হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
ভূমিসচিব, নৌপরিবহন সচিব, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ -বিআইডব্লিটিএ’র চেয়ারম্যান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া ও পাবনার জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাবিব-উন-নবী। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আশিকুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আইনজীবী হাবিব-উন-নবী বলেন, আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে বালুমহাল ইজারা ও সব ধরনের বাণিজ্যিক বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এইদিন গোয়লন্দ থেকে পাকশি পর্যন্ত পদ্মা নদীতে কোনো বালু মহাল ইজারা দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে কোনো বালু মহাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বালু উত্তোলন করা যাবে না।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে পাবনার পাকশী পর্যন্ত পদ্মার যে নৌপথ পথ রয়েছে, এই নৌপথ দিয়েই রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহন করা হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে ভারি ঝুঁকিপূর্ণ এই পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে সরকার বিআইডব্লিউটিএ’র অধীনে এ নৌপথের নাব্যতা উন্নয়নের প্রকল্প নেয়। ৯৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে পদ্মার ১৫টি অংশে খনন কাজ চলছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আবেদনে বলা হয়, গোয়ালন্দ থেকে পাকশি পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন অংশে বাল্কহেড বা বাংলা ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করায় কৃষি জমি, বাড়িঘর বিলীন হয়ে এ নৌপথ আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভারি মালামাল পরিবহন বন্ধ হয়ে যেতে পারে উল্লেখ করে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদে চিঠি দিয়েছে বিআইডব্লিটিএ। তাতে কোন কাজ হয়নি।
এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর-প্রতিবেদন ছাপা হলে সেসব যুক্ত করে প্রথমে গত বছর ১৪ জুন ভূমিসচিব, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া ও পাবনার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবী। তারা হলেন- ফরিদ হোসেন মাহাদী, মো. রাশেদুজ্জামান রানা, মো. ওয়াহিদুজ্জামান, মুরাদ মিয়া ও কাজী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তাতে কাজ না হওয়ায় হাইকোর্ট জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন তারা। সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রুল জারি করেন। সে রুলটি বিচারাধীন রেখে সম্প্রতি সম্পূরক আবেদন করেছিলেন রিটকারীরা।