শিবগঞ্জে সরিষা চাষ বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে মৌচাষ। বেড়েছে মধুর উৎপাদন। ঘুচেছে অনেক বেকারত্ব।কৃষি অফিসের আশা আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই শিবগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে,এমনকি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কৃষকরা মৌচাষ করবে এবং তা সংরক্ষণের মাধ্যমে সারা বছর বিক্রী করা হবে। সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি মাঠে মৌচাষীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এ মৌসুমে শিবগঞ্জে নড়াইল, সাতক্ষীরা, নওগাঁ, নিয়ামতপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ৬টি ও শিবগঞ্জের ২টি মোট ৮টি মৌচাষীর দল বিভিন্ন মাঠে মৌচাষ করেছে। প্রতিটি দল ৪ থেকে ন্যুনতম ২ মেট্রিকটন মধু উৎপাদন করেছে।
তারা জানান, মধু চাষ করা কষ্টকর হলে এপেশায় আমরা স্বাবলম্বী হয়েছি। তাই খুব ভাল লাগে। উৎপাদিত মধু কেজি প্রতি ৪ টাকা দরে বিক্রী করি।তবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে আরো বেশী দরে বিক্রী করার সুযোগ হতো। গত সপ্তাহে নড়াইল থেকে আসা উপজেলাা দূর্লভপুর ইউনিয়নের মাঠে আম বাগানে মৌচাষী লিটন কাজীর সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, গত ১৭ নভেম্বর তারিখে আমরা ৪ জন আম বাগানে তাঁবু ও ফ্রেম বসিয়ে মধু সংগ্রহ শুরু করেছি। এ সপ্তাহেই চলে যাবো। এপর্যন্ত প্রায় ৩ মেট্রিক টন মধু সংগ্রাহ করেছি। বিক্রী করেছি ৪শ টাকা কেজি দরে। তবে পাইকারী দরে আরো কিছু কম দর পাই। পরিবেশ খুব ভাল। তবে কৃষকরা না বুঝে সরিষা ফুল ঝরার আগে কীটনাশক প্রয়োগ করায় অনেক মৌমাছি মারা গেছে।
তিনি বলেন, এ মৌসুমে ১৩৬০টি ফ্রেম অথাৎ বসিয়েছি।প্রায ২৫বছর আগে একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার ট্কাা কিস্তির টাকা উত্তোলন করে ২০টি বক্স্র অর্থাৎ ১শ ফ্রেম( যেখানে মৌমাছি থাকে) কিনে মৌচাষ শুরু করেছিলাম। বর্তমানে ২৭২টি বক্্র অর্থাৎ ১৩৬০টি ফ্রেম নিযে মৌচাষ করছি। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২হাজার ফ্রেম অর্থাৎ ২শ বক্স অর্থাৎ গড়ে ৭শ টাকা দরে বিক্রী করেছি। ফ্রেম প্রতি খরচ হযেছে গড়ে আাড়ই শ থেকে ৩শ টাকা। বর্তমানে আমার মৌমাছির খামারের দাম ১০ লাখ টাকা। তাছাড়া আমার খামারে ৫/৬জনের কর্মস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, একটি বক্সে ৫টি ফ্রেম থাকে। প্রতিটি বক্সে একটি করে রানী মৌমাছি থাকে এবং শ্রমিক মৌমাছিরা মা্েঠ মাঠে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে আসেএবং ফ্রেমে জমা করে। আমরা সেগুলি সপ্তাহ পর পর সংগ্রহ করি। মৌচাষে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী অফিসার রয়েল মাঝে মাঝে পরামর্শ দিযেছেন এবং তা যথাযথভাবে পালন করে উপকৃত হয়েছি। তবে উপজেলা কৃষি অফিস পুরাপুরি সহায়তা করলে আমরা আরো লাভবান হতে পারতাম। সরেজমিনে আরো ৪/৫টি মৌচাষীদের আলাপ কালে প্রায় একই কথা বললেন।
শিবগঞ্জ পৌরসভার উপসহকারী কৃষি অফিসার গোলাম আজম কনক বলেন, আমার পৌরসভা এলাকায় মৌচাষে আগ্রহী করতে কৃষকদেরকে বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দিয়েছি এবং সামনে বছর এলাকার কৃষকদের মধ্য হতেই মৌচাষী হবে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষি বিদ শরিফুল ইসলাম বলেন, জেলার বাহির থেকে আসা মৌচাষীরা আমাদের না জানিয়ে আসায় সহযোগিতা করতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। তিনি আরো জানান, এ বছর জেলার বাহির ও উপজেলা মিলে প্রায় ৮টি মৌচাষী দল মধু চাষ করেছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায ২০/২২ মেট্রিক টন। যা গত ২০২১ সালে ৪ টি মৌচাষ দল ছিল এবঙ মধু উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৮ মেট্রিক টন।২০২০ সালে মাত্র ২টি মৌচাষীর দল ছিল এবং মধু উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৩ মেট্রিক টন।
তিনি বলেন, কৃষি অফিসের প্রচেষ্টায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সরিষার চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করায় ফলন ও দাম বেশী পাওয়ায় শিবগঞ্জের কৃষকরা সরিষা চাষাবাদে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেযেছে। ফলে মৌচাষে মৌচাষীরা ঝুঁকে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, যেহেতু মুধুতে প্রচুর প্রেটিন আছে এবং যে কোন রোগ প্রতিরোধ মধু অদ্বিতীয়, তাই পরিকল্পনা করেছি এ উপজেলাতেই প্রশিক্ষণের মাধ্য্যমে কৃষকদেরকে মৌচাষে উদ্বুদ্ধ করবো এবং যান্ত্রিক পদ্ধতিতে মধু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবো।