চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের পাশেই,আরামবাগ মোড়। রাত ১১টা। অনেকটায় ফাঁকা হয়ে এসেছে সড়ক। মাঝে মধ্যে সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে ছেড়ে আসা ট্রাকগুলো যেন রাতের নিরবতা ভাংছে। শীতের কারণে মূলসড়কে মানুষ না থাকলেও গলির এ মোড়ে অন্তত ৩০ জনের মত নারী বসে আছেন, সারিবদ্ধভাবে। কেউ ইটের উপর বসেছেন, কেউ বাড়ি থেকে আনা চট, কেউ বসেছেন মোড়া বা ছোট টুলে। শীতের মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকা মানুষগুলো এ অপেক্ষা, ওএমএসের ৫ কেজি চালের জন্য। সকাল ৯টায় শুরু হবে ডিলার পয়েন্টে চাল-আটা বিক্রি, সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তারা। শুধু আরামবাগ নয়, শহরের বিশ্বরোড মোড়েও ওএমএসের চালের জন্য একইভাবে অনেককে রাত জেগে অপেক্ষা করতে দেখেন এ প্রতিবেদক।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ১৯জন ডিলার মাধ্যমে ওএমএসের মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে। সপ্তাহে দুইদিন প্রতিটি ডিলার পয়েন্টে চাল ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি ও ২৪ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি করে আটা জনপ্রতি বিক্রি করা হয়। পয়েন্টেগুলোতে খুব সকাল থেকে অপেক্ষায় থাকে মানুষ, কোন কোন পয়েন্টে আগের দিন রাত থেকেও অপেক্ষমান থাকেন অনেকে।
আরামবাগ এলাকায় ওএমএসের দোকানের পাশে অপেক্ষামান সেলী বেগম জানান মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে অপেক্ষা করেও বুধবার চাল পাননি। এখন বৃহস্পতিবারে যাতে চান পান সে জন্য বুধবার সন্ধ্যা থেকে আবারো অপেক্ষা করছেন। সেলী বেগম বুধবার রাত ১১টার দিকে এ প্রতিবেদক বলেন, বাড়িতে প্রতিদিন দেড় কেজি চ্যাল লাগে, এক কেজি আটা লাগে। বাড়িতে সাতটা খানাআলা (সদস্য), যদি চ্যাল না প্যায় তাহলে সে মানুষ গুলা কি খ্যায়। সপ্তাহে সপ্তাহে অ্যাসা ঘুরা চল্যা যাতে হচ্ছে। তাহলে কিভাবে হামরা চলব, সারা র্যাত হামরা এ্যাসা বসা আছি। কাল সন্ধ্যার সমাও (সময়) অ্যাসাও ঘুর্যা গেছি। আজ আবার এ্যানু।
চালের জন্য অপেক্ষা করছিলেন শাকেরা বেগম নামে আরেক নারী। তিনি বলেন গত বছরও তিনি লাইনে চাল কিনতে আসেননি। এখন চালের দাম এতো বেড়ে গেছে যে বাধ্য হয়েই তাঁকে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে।
রাত যত বাড়ে, শীতের তীব্রতাও বাড়ে, সেই সাথে বাড়ে চাল কিনতে আসা মানুষের সংখ্যা। এভাবেই সেলী-সাকেরাদের রাত কেটে যায়। সকালের আলো ফুটে। রাত জাগাদের সাথে নতুন করে যুক্ত হন আরো অনেকেই,লাইনে দাঁড়িয়ে তখন সবার অপেক্ষা কখন খুলবে ওএমএসের চালের দোকান। সকাল ৯টায় যখন চাল দেয়া শুরু করেন ডিলার নুরুল ইসলাম, এভাবেই ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে ৫ কেজি চাল কিনে বাড়ি ফিরে যান সেলি কিংবা সাকেরা বেগম। আবার কাউকে কাউকে ফিরতে হয় শূণ্য হাতে, তখন ডিলারের সান্তনা, আজ শেষ আগামী সপ্তাহে আসিও তোমার বিষয়টা দেখব।
আরামবাগ এলাকার ডিলার নুরুল ইসলাম বলেন, শীতের রাত তবুও মানুষ কষ্ট করে অপেক্ষা করে। কিন্ত আমার যে বরাদ্দ তাতে সবাইকে দিতে পারি না। ম্যালা মানুষই ঘুরা যায়। যদি বরাদ্দটা বাড়ে তাহলে লাইনে এতো ঝামেলা হবে না, সবাই পাবে।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ইসরাইল সেন্টু বলেন, যেটা দিচ্ছে সেটা যথেষ্ট পরিমান নয়, সেই সাথে আছে ব্যবস্থাপনার ত্রুটি। সবাই পাচ্ছে না। প্রত্যেকে যাতে পায়, সেই লক্ষে ব্যবস্থাপনাটা পরিবর্তন প্রয়োজন। জনগনের দু:খ কষ্ট লাগবের জন্য আমরা বলছি এ পদ্ধতিটা পাল্টানো হোক, রেসোনিং চালু করা উচিত।
একই মতামত দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জাসদের সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিরও। বলেন দু:খজনক হলেও সত্য ৫ কেজি চাল ৫ কেজি আটার জন্য রাত থেকে মানুষ লাইন ধরে থাকছে। আমরা জাসদ নীতিগতভাবে মনে করি প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে দুটি করে রেসোনিং দোকানের ব্যবস্থা করা, এটা করলে গরিব মানুষের দূর্ভোগ কমবে।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন বলেন, বর্তমান সরকারের অনেকগুলো জনবান্ধব কর্মসূচী রয়েছে বাজার নিয়ন্ত্রন ও জনগনের খাদ্যদব্য প্রাপ্তি সহজিকরনের জন্য। টিসিবি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী, ওএমএস, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, অনগ্রসর জনগোষ্টির জন্য আর্থিক সহায়তা, শিক্ষা উপবৃত্তি, এছাড়াও জিআর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রান ও কল্যান তহবিল হতে আর্থিক মঞ্জুরী, মাননীয় সংসদ সদস্যের এচ্ছিক তহবিল ছাড়াও অনেক সাহায্য সহযোগিতা সরকার জনগনকে করে থাকে। এ জেলার জনগোষ্টির প্রায় ১৪ লাখের কাছে কোন না কোন সরকারি সহায়তা সরাসরি পৌচ্ছে যাচেছ এ সকল কর্মসূচীর মাধ্যমে। আমরা সবকিছুই সুশৃঙ্খল ভাবে করার চেষ্টা করছি। ওএমএসের বিষয়ে যেহেতু আপনারা বললেন, সেটি আরো সুন্দর ভাবে করার জন্য আমি পদক্ষেপ নিব।