চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে রমরমা চড়াও সুদ বাণিজ্যের অন্যতম প্রতিষ্ঠান মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’র কর্মীরা গ্রাহকের সাড়ে ৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই এনজিওটির অন্যান্য শাখাগুলোর গ্রাহকদের টাকা নিয়ে টালবাহানা করছেন বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। তবে, কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
জানা গেছে, সাম্প্রতিককালে বিনোদপুর শাখা ব্যবস্থাপক আবু সায়েম প্রায় ৫৯ লাখ টাকা ও কর্মী শামীম রেজা ৪৩ লাখ টাকা, শ্যামপুর শাখার কর্মী মোঃ নয়ন আলী ১৫ লাখ টাকা ও ছত্রাজিতপুর শাখা ব্যবস্থাপক আব্দুল খালেক ৮০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন। এছাড়াও আরো কয়েকজন কর্মী প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। তাদের এখনো কোন সন্ধ্যান মেলেনি। কিন্তু মধুমতি এনজিও কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণও করেনি বলে জানা গেছে।
বিনোদপুর শাখার গ্রাহক মোসাঃ শামিমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, তাঁর জমাকৃত এফডিআর’র সাড়ে ৩ লাখ টাকা উত্তোলন করতে গেলে অত্র শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ ইসমাইল হোসেন টাকা না দিয়ে উল্টো গ্রাহকের সাথে অস্বাদ আচরণ করেন। শুধু শামিমা আক্তার-ই নয়, মোঃ আলম আলীর ১০ লাখ, মোসাঃ নাজমা বেগমের ১ লাখ ৫০ হাজার, মোসাঃ সুমি বেগমের ২ লাখ ৫০ হাজার, বেনজির আহম্মেদের ৩ লাখ টাকাসহ অর্ধশতাধিক গ্রাহকের এফডিআর এর লাখ লাখ টাকা নিয়ে ফেরত দিতে টালবাহানা করছেন সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ।
এছাড়া এফডিআর এর টাকা ফেরত নিতে বৃহষ্পতিবার দাদনচক শাখায় ২০/২৫জন গ্রাহক এফডিআর এর টাকা উত্তোলনের জন্য অত্র অফিসে গেলে তাদের টাকা না দিয়ে অস্বাদ আচরণ করে বিদায় করে দেন বলে গ্রাহকদের মৌখিক অভিযোগ।
এব্যাপারে দাদনচক শাখা ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম ও ক্যাশিয়ার মোঃ রুহুল আমিন জানান, গত বৃহষ্পতিবার কিছু গ্রাহক আমাদের কাছে এসেছিল। তাদের বুঝ দেয়া হয়েছে। তারা আরো বলেন, কিছু কিছু এনজিও গ্রাহকদের টাক নিয়ে উধাও হওয়ায় আমাদের গ্রাহকেরা তাদের টাকা উত্তোলনের জন্য চাপ দিচ্ছে।
তার আরো জানান, এই শাখার তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, তথ্য দিতে পরিচালকের নিষেধ আছে। যদি কোন মিডিয়া লোক আসে তাহলে সরাসরি পরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দিতে বলেছেন।
এব্যাপারে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’র পরিচালক মোঃ মাসুদ রানার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মধুমতি একটি বড় প্রতিষ্ঠান। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ঘটলেও কোন গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করা হয়নি। কয়েকটি শাখায় গ্রাহকদের সাথে শাখা ব্যবস্থাপক ও কর্মচারিদের সমস্যা হয়েছিলো। পরে বিষয়টি জেনে সমাধান করা হয়েছে। তবে, তিনি সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা এনজিও ফোরামের সভাপতি মোঃ তৌহিদুল আলম টিয়া জানান, সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক সমস্যা চলছে। বাংলাদেশেও চলছে। মধুমতি এনজিও’র ব্যাপারে তিনি বলেন, ভিতরের খবর আমার জানা নেই। আমার জানা মতে মধুমতি এনজিও’র প্রতিটা শাখা চলছে। তবে, কোন এনজিও’র মালিক বা শাখা গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়, তবে গ্রাহকরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই পরামর্শ্য হলো, মধুমতিসহ প্রতিটা এনজিও মালিকের উচিত গ্রাহকদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে এনজিও’র কার্যক্রম অব্যহত রাখা।
এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাঃ উম্মে কুলসুম জানান, সবগুলো এনজিও সংস্থা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত নয়। কিছু কিছু এনজিও সংস্থা সমাজ সেবা থেকে নিবন্ধিত। মধুমতি এনজিও সংস্থার ব্যাপারে তেমন কোন জানা নেই। তবে, সাম্প্রতিককালে সঠিক তদন্তপূর্বক অবৈধ এনজিওগুলোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অফিসে প্রতিবেদক দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সমাজ সেবা কর্তৃক নিবন্ধিত যে কোন এনজিও’র বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।