টাঙ্গুয়ার হাওর দেখার বেশি ইচ্ছে হয়েছিল আমার স্ত্রী শাহীনা আহমেদের। সেই কারণে ভ্রমণ ভেলার সংগঠক চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি মাজহারুল হক মান্না ভাইকে প্রোগ্রাম সাজানোর অনুরোধ করেছিলাম। তিনি জানালেন তারা কয়েক বন্ধু মিলে একটা বোট নামিয়েছেন। অভিযাত্রিক বোট-৫ নামে এই বোটে উন্নত মানের কেবিন, হাই কমোডসহ ওয়াশরুম ১২/১৩ জনের ভ্রমণের জন্য সুন্দর আয়োজন আছে। আমার স্ত্রীর পায়ের ব্যথা ও মিলা ভাবির জ্বরের অনিশ্চয়তাকে কেটে অবশেষে ১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতের বাসে রওনা দিলাম আমরা । আমি, আমার স্ত্রী শাহীনা আহমেদ, মেয়ে ঈশিকা ও রাইদা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ এম রাসেল চৌধুরী ভাই, মিলা ভাবি, তাদের এক পুত্র দাইয়াত ও এক মেয়ে নাজলি ও নওরোজ ভাইয়ের মা ও বাপ্পি ভাই ও মান্না ভাই।

শুক্রবার ভোরে আমাদের বাস পৌঁছে সুনামগঞ্জ শহরে। তখন প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলো। আমরা দুটো অটো নিয়ে সুরমা নদীর সাহেববাড়ি ঘাটে পৌঁছলাম। বৃষ্টির কারণে বোটে নাস্তার আয়োজনে একটু বিঘ্ন ঘটে। নির্দিষ্ট খিচুড়ি ডিমের পরিবর্তে দোকান থেকে পরোটা ভাজি কিনে আনা হয়। যাত্রা শুরু হলো হাওরের দিকে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে বোট এগিয়ে চললো, প্রথমে খরচার হাওর। চারিদিকে প্রাকৃতিক দৃশ্য। কিছুক্ষণের মধ্যে গরম চা। দুপুরের দিকে খরচার হাওর পার হয়ে আমরা পৌঁছলাম টাঙ্গুয়ার হাওরে। সেখানে ওয়াচ টাওয়ারের পাশে আমরা হাওরে গোসল করতে নামলাম। গোসল শেষে বোটে দুপুরের খাবার, মেনু মুরগীর মাংস, রুই মাছ, ডাল ও শুটকি ভর্তা। এরপর বোট এগিয়ে চললো টেকেরঘাটের দিকে। সেখানে পৌঁছে বিকালে শহীদ সিরাজ লেক ( নীলাদ্রি লেক) দেখা, সন্ধ্যায় টেকেরঘাট বাজারে টুকিটাকি কেনাকাটা করে বোটে ফিরে লেবুর সরবত, নুড়ুলস ও চা । রাতের খাবারে হাঁসের মাংস, কালিয়া মাছ, আলু ভর্তা, ডাল। রাতে টেকেরঘাটের কাছে হাওরের একটু মাঝে গিয়ে বোট নোঙর করে রাত্রি যাপন। আশে পাশে অনেকগুলো বোট একসাথে রাত্রি যাপন।

দ্বিতীয় দিনের শুরুতে প্রত্যুষে উঠে চা বিস্কুট খেয়ে মেঘালয় ঘেঁষা লাকমাছড়া পরিদর্শন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ, পাথরের উপর দিয়ে স্বচ্ছ পানি প্রবাহে হাঁটাহাঁটি ও ছবি তোলা। এরপর বোটে এসে খিচুড়ি ডিম দিয়ে সকালের নাস্তা। সেখান থেকে রওনা দিয়ে যাদুকাটা নদী তীরবর্তী মানিগাঁ গ্রামে ১০০ একর এলাকা জুড়ে শিমূল বাগান পরিদর্শন, মেয়েদের ঘোড়ায় চড়া, নদী থেকে প্রাকৃতিক কয়লা উত্তোলন দেখা। তারপর যাদুকাটা নদী তীরবর্তী মেঘালয় ঘেঁষা বারিক্কা টিলা পরিদর্শন। সেখান থেকে এসে লেবুর সরবত। গরম চা তো আছেই। তারপর যাদুকাটা নদীতে গোসল। পরে বোটের ছাদে বসে মধাহৃ ভোজ, মেনু ছিল মুরগী মাংস, রুই ু,সবজি ও ডাল । ফেরার পথে বিকালে মুড়িমাখা, সাহেববাড়িঘাটে এসে বোটে বোয়াল মাছ, হাঁসের মাংস, ডাল ও সবজি দিয়ে রাতের খাবার। পরে ফল খেয়ে রাতে বোট থেকে শহরে এসে বাস যোগে ঢাকায় ফিরা। রোববার ভোরে ঢাকায় পৌঁছলাম।
বৃষ্টিভেজা দুই দিনের এই টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ সত্যিই আনন্দদায়ক হয়েছে। অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ হয়েছে। ধন্যবাদ জানাই মান্না ভাইকে এরকম সুন্দর একটি আয়োজনের জন্য।
- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল