ঝিনাইদহে রাজা মুকুট রায় নামে এক প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন। রাজা মুকুট রায়ের অনেক সৈন্য সামন্ত ছিল। কথিত আছে তিনি ১৬ হল্কা হাতি, ২০ হল্কা অশ্ব ও ২,২০০ কোড়দার না নিয়ে বের হতেন না। খাঁন জাহান আলী (রাঃ) এর মত তিনিও জলাশয় প্রতিষ্ঠায় যত্নবান ছিলেন। রাস্তা নির্মাণ ও জলাশয় খনন করতে করতে তিনি অগ্রসর হতেন। ঝিনাইদহে তাঁর এমনি একটি অমর কীর্তি ঐতিহ্যবাহী পাগলা কানাই ইউনিয়নের ঢোল সমুদ্র দীঘি। প্রায় ৫২ বিঘা জমির উপর অবস্থিত এ দীঘি ঝিনাইদহের সর্ববৃহৎ দীঘি। দীঘিটি শতাব্দী পরিক্রমায় পানীয় জলের অফুরন্ত আধার হিসেবে কাজ করেছে এবং একজন পরাক্রমশালী রাজার রাজকীয় স্থাপনা সমূহের একটি স্মৃতি হিসেবে আজও টিকে আছে।
ঝিনাইদহ শহরের পূর্বে বিজয়পুর ছিল রাজা মুকুট রায়ের রাজধানী। বাড়ীবাথানে রাজার প্রকান্ড গোশালা ছিল। বহু সংখ্যক গাভী ছিল বলে লোকে তাকে বৃন্দাবনের নন্দ মহারাজ বলত। বেড়বাড়ীতে রাজার উদ্যান ছিল। রাজার কোড়াদার সৈন্যরা যেখানে বসবাস করত সে স্থানের নাম কোড়াপাড়া হয়েছে। এ সমস্ত স্থান এখনও বর্তমান। রাজা মুকুট রায়ের রাজবাটির কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবে ঢোল সমুদ্র দীঘির দক্ষিণে ক্ষয়ে যাওয়া ইটের স্তুপে কোন ঐতিহাসিক নিদর্শন লুক্কায়িত থাকতে পারে বলে পুরাতাত্ত্বিকেরা মনে করেন।
ঢোল সমুদ্র দীঘিটি ঝিনাইদহের একটি আকর্ষণীয় বিনোদন স্থান। ঢোল সমুদ্র দীঘি খননের পেছনে একটি লোকশ্রততি আছে-রাজা মুকুট রায়ের রাজত্বকালে একবার জলকষ্ট দেখা দেয়। বিল, বাওড়, নদী দীঘি- কোথাও জল ছিল না। অনন্যোপায় হয়ে রাজা দীঘি খননের সিদ্ধান্ত নেন। অগণিত লোকের দিন রাত পরিশ্রমে দীঘি গভীর হতে গভীরতর এবং চতুর্দিকে প্রশস্ত হতে লাগল। কিস্তু পুকুরে জল উঠল না। হতাশ রাজা একদিন স্বপ্ন দেখলেন যে, রাণী যদি পুকুরে নেমে পূজা দেন, তবে পুকুরে জল উঠবে। এ কথা জেনে প্রজাহিতৈষী রাণী পূজার নৈবেদ্য নিয়ে পুকুরে নামলেন। রাণী পুকুরের তলদেশে উপস্থি হয়ে ইষ্টদেবতাকে নিবেদন করলেন পূজার অর্ঘ্য। জল ওঠা শুরু হলো। প্রার্থনা পূর্ণ হওয়ায় রাণী উপরে উঠতে শুরু করলেন। সহসা প্রবলবেগে জলরাশি উথ্থিত হল। জল দেখে উদ্বেলিত পাড়ের সহস্র প্রজার উৎসব-আনন্দ আর বাদ্য-বাজনার মধ্যে অলক্ষ্যে রাণী অথৈ জলরাশির গভীরে তলিয়ে গেলেন। গভীর শোকে শোকাভিভূত প্রজাগণ রাজাকে রাজপুরীতে যেয়ে এই দুঃসংবাদ জানালেন। সেই স্মৃতি স্মরণে আজও লোকজন এ দীঘিকে ঢোল সমুদ্র দীঘি বলে জানে।