তাসনিম জ্যোতির জমজ দুই সন্তান। আরিয়ান ও আয়ান। মায়ের কফিন জড়িয়ে কাঁদছে। বলছে, ‘আম্মু ওঠো’, 'আম্মু ওঠো'। তবে আদরের দুই সন্তানের ডাকে শেষ বারের মতোও সাড়া দেননি তাসনিম জ্যোতি। চুয়াডাঙ্গায় তাসনিমের বাড়িতে এই দৃশ্য দেখা গেছে। নেই মা, নেই বাবা। জমজ দুই শি’শু এখন এতিম।
শিশু দুটি কাঁদছে। তাদের সাথে পুরো পাড়া কেঁদেছে। পুরো শহর কেঁপেছে আরিয়ান আর আয়ানের কণ্ঠে বলা একটাই শব্দে—"মা!" মায়ের লাশ দাফন হয়ে গেছে। কিন্তু যমজ বাচ্চাদের কান্না কেউ থামাতে পারেনি।
তাদের মাকে চাই। আম্মুকে এনে দাও। অন্য দিকে তাসনিম জ্যোতির ব্যবহৃত স্বর্ণ গহনা ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত স্বজনরা ।শেষ বিদায়েও মা-সন্তানের দেখা হয়নি। সন্তানরা শুধু একটানা কাঁদছিল, "আম্মু কই? আম্মুকে দেখতে চাই!"
সারারাত ‘মা মা’ করে কাঁদছে তাসনিম জ্যোতির যমজ শিশুরা। কিন্তু মাকে তো তখন চেনার অবস্থায় নেই, দেখারও মতো নয়। মায়ের লাশ এতোটা বিকৃত ছিল যে বাচ্চাদেরকে মাকে শেষবারের মতো দেখানো যায়নি।
বাড়ি ফিরে যমজ সন্তানকে আদর করা হল না তাসনিম জ্যোতি। ভয়ঙ্কর ম্যানহোলে হারিয়ে গেলেন জ্যোতি। গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকা, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশ বৃষ্টিতে ভেসে থাকা রাস্তায় হাঁটছিলেন তাসনিম।
প্রতিদিনকার মত অফিস শেষে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। হাঁটুজল ঢেকে রেখেছিল রাস্তাকে। বোঝার উপায় ছিল না। পায়ের নিচেই ছিল একটা মৃত্যুফাঁদ। হঠাৎ করেই তলিয়ে যান তিনি ম্যানহোলে।
স্থানীয় একজন দৌড়ে এসে তাঁকে ধরার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আরিয়ান ও আয়ান হারিয়ে ফেলেছে তাদের পুরো পৃথিবী।