চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাজারের উরসের নামে অপকর্ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে এক ভুয়া পীরের বিরুদ্ধে। এনিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে স্থানীয় নারীরা। ঘটনাটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার মিয়াপাড়ায় নক্বশবন্দিয়া মুজাদ্দাদীয়া রউফ মিয়া দরবার শরীফের।
প্রতিবাদী স্থানীয় নারীরা মৌখিক অভিযোগে জানান, নক্বশবন্দিয়া মুজাদ্দাদীয়া রউফ মিয়া দরবার শরীফে উরসের নামে নারীদের নিয়ে নানা অপকর্ম ও অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হন ভন্ড পীর খাদেমুল ইসলাম (৫০)। এনিয়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রী এসব কুকর্মের প্রতিবাদ জানালে তাকেও ডিভোর্স দেন খাদেমুল ইসলাম। এঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে স্থানীয়রা।
মাজারের বিপরীতে বাড়ি স্থানীয় বাসিন্দা রহিমা বেগমের। তিনি বলেন, প্রত্যেক বছরের মার্চ মাসের যেকোন শুক্র, শনি ও রবিবার তিন দিন ব্যাপী উরসের নামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় নক্বশবন্দিয়া মুজাদ্দাদীয়া রউফ মিয়া দরবার শরীফে৷ সেখানে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা থেকে বিভিন্ন বয়সী নারীরা আসে উরস পালন করতে। তাদের কাছে নেয়া হয় ধান, চাল, গরু, ছাগলসহ নগদ অর্থ। তিন দিন ব্যাপী উরসের নামে চলে ভন্ডামী।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জানা মতে নক্বশবন্দিয়া মুজাদ্দাদীয়া রউফ মিয়া দরবার শরীফের পীর খাদেমুল ইসলাম কোন পীর নয়। সে একজন ভন্ড প্রকৃতির লোক। প্রত্যেক বছরের নিদিষ্ট কিছু দিন বাইরে থেকে নারী এনে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। যা এলাকার সকল নারী জানে এবং এতে এখানকার পরিবেশ বিনষ্ট হয়।
খাদেমুলের প্রতিবেশী তাসলিমা বেগম (৪২) জানান, তিন দিন ব্যাপী উরসের নামে নারী নিয়ে আনন্দ-ফূর্তি করায় খাদেমুলের কাজ। বাড়িতে দুইটি স্ত্রী থাকার পরেও তাদের সামনেই এসব কর্মকান্ড করে সে। বিষয়টি এই এলাকার যাকেই জিজ্ঞেস করা হবে, সেই একই কথা বলবে।
তার সাবেক এই স্ত্রী বলেন, আমি বাড়িতে বাচ্চাদের কোরআন শিক্ষা দিই। সেখান থেকে যা উপার্জন করি, তা সংসারে খরচ করি। নক্বশবন্দিয়া মুজাদ্দাদীয়া রউফ মিয়া দরবার শরীফ নামের কথিত মাজারের সম্প্রসারণ করার জন্য আমার বাবার জমি বিক্রি করা টাকা নিয়েছে। এছাড়াও একাধিকবার এমন করে জোরপূর্বক টাকা আদায় করেছে সে। অথচ এরপরেও নানারকম নির্যাতন চালাতো আমার উপর।
তিনি আরও বলেন, আমার চোখের সামনে উরসের সময়ে বাইরের মেয়েদের নিয়ে রাত কাটায়। এটা কোন স্ত্রী মেনে নিতে পারবে? যতবারই দেখেছি ততবারই বাধা দিয়েছি, প্রতিবাদ করেছি। বিনিময়ে আমাকে ব্যাপক মারধর করেছে কথিত পীর খাদেমুল ইসলাম। শেষমেশ তার কোন পরিবর্তন না দেখতে পেয়ে ও দুইটা ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তার সংসার ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল খালেক, ফেরদৌস সিহানুক, মাবিয়া বেগমসহ আরও অন্তত ৫-৬ জন নারী-পুরুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে একই অভিযোগ। পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবে এলাকার শালীনতা বজায় রাখতে এসব ভন্ড পীরের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান এলাকাবাসী।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, নক্বশবন্দিয়া মুজাদ্দাদীয়া রউফ মিয়া দরবার শরীফের পীর খাদেমুল ইসলাম। তিনি বলেন, এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।
গোমস্তাপুর থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) আলমাস আলী সরকার মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।