শিবগঞ্জে গ্রাহকের প্রায় দেড় কোটি নিয়ে উধাও হয়েছে ১৫ রশিয়া ফাউন্ডেশন নামে একটি স্থানীয় এনজিও। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে এ কান্ড ঘটিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৫ রশিয়া ফাউন্ডেশন (পিএফ) এর পরিচালক আসদাক ও তার ছেলে আশিক। শিবগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিয়ে ( নিবন্ধন নং স.সে.অ. নবাব-৪৯৫/১৫ )এনজিও শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের খাসেরহাটে প্রধান কার্যলয় করে ২০১৪ সাল থেকে অবৈধভাবে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন তারা।
সরজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিষ্ঠানটির অফিস বন্ধের দৃশ্য দেখা গেছে। সোমবার সকালে সরজমিনে গেলে ১৫ রশিয়া ফাউন্ডেশনের কয়েখজন কর্মী জানান, ঈদের আগে আমরা ঠিকমতই অফিস করেছি। ঈদের ছুটিতে পরিচালক আসদাক আলি ও তার ছেলে শাখা ব্যবস্থাপক আশিক শাখার ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা লোপাট করে পালিয়ে বলে জানতে পারলাম। শুধু টাকাই নয় অফিসের আসবাবপত্রও নিয়ে গেছে। এখন আমরা চরম বিপাকে। একদিকে গ্রাহকরা আমাদের চাপ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে আমাদের জামানতের টাকাও হারালাম।

তারা আরো জানান, পরিচালকের স্ত্রীকে বিষয়টি জানালে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের গালিগালাজ ও খারাপ মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকি ধামকি দেয়। বিষয়টি জানাজানির পর সাধারণ গ্রাহকরা কিস্তি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রাহকদের চাপের মুখে পরিচালকের সাথে কর্মীরা ফোনে আলাপ করলে তিনিও বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছেন বলে কর্মীদের অভিযোগ। এনজিওটির গ্রাহক আবু সায়েম, আলম, হারিজ, নজরুল, সোহবুল, নুরুল ও নাজমা সহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে এই এনজিওতে বিশ্বাস করে টাকা জমা রেখেছিলাম। কিন্তু ঈদের পর থেকে আর অফিস খুলেনি। পরে জানতে পারি পরিচালক আসদাক আলি ও তাঁর ছেলে শাখা ব্যবস্থাপক আশিক সব টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই এবং তাদের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে ১৫ রশিয়া ফাউন্ডেশন (পিএফ) এনজিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আসদাক আলী মাস্টার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগে চেষ্টা করা হলে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। শুধু ১৫রশিয়া ফাউন্ডেশনই নয়, গত দুই বছরের শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে লোপাট করে প্রায় ৮/১০ টি নামে-বেনামে এনজিও। তার মধ্যে রুপালী সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, মার্সেল অরফানসবিডি ফাউন্ডেশন, কুসুম কলি পল্লী উন্নয়ন সোসাইটি, ফাইজা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, আল রাজী ও পিয়াস ডেভেলপমেন্ট সহ নাম করা এনজিও। এসময় এনজিওর পরিচালকগণ জনগণের কোটি কোটি টাকা নিজ পকেটে নিয়ে লোপাট হয়েছে। এমন অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটলেও কোনো কর্ণপাত করছেন না স্থানীয় প্রশাসন বলে অভিযোগ ভূক্তভোগী জনগণের।
এদিকে নামে -বেনামে ব্যাঙের ছাতার মতো গজে উঠেছে অস্তিত্বহীন এনজিও নামে সুদের ব্যবসার প্রতিষ্ঠান। এই এনজিওগুলো সমাজ সেবা, যুব, সমবায় ও জয়েন্টস্টকের নিবন্ধন নিয়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরেটি (এমআরও)’র কোনো অনুমতি না থাকা সত্যেও তাদের ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এক সময় এনজিওগলো জনগণের টাকা নিজ পকেটে নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে পরিচালকরা। যেনো জনগণের টাকা আত্মসাৎ ও লোপাটের শীর্ষে পরিণত হয়েছে শিবগঞ্জের এই এনজিওগুলো।
উপজেলা সমাজ সেবা ও যুব অধিদপ্তর বলছেন, আমাদের দপ্তর থেকে যাদের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে, তারা শুধু সমাজের উন্নয়নের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হয়ে কাজ করবে। তারা কোনো ঋণ কার্যক্রম করবে না এই মর্মে তাদের কাছ থেকে প্রত্যায়ন পত্র নেয়া হয়েছে।
এব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস জানান, ১৫ রশিয়া ফাউন্ডেশন (পিএফ) এনজিওটি আমাদের নিবন্ধিত। তাদের শুধু স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের জন্য নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। তারা কোন ঋণ কার্যক্রম চালাতে পারবে না। এই এনজিওটি উধাও হওয়ার বিষয়টি জানলাম মাত্র। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।