সিবিএস নিউজের 'সিক্সটি মিনিটস'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিশেষজ্ঞ কাই-ফু লি চাকরির বাজার নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আগামী ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের ৪০ শতাংশ চাকরি চলে যাবে স্বয়ংক্রিয় রোবটের নিয়ন্ত্রণে।
এছাড়া, এক অক্সফোর্ড গবেষণায় কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতি নিয়ে সতর্ক করে বলা হয়, ভবিষ্যতে শ্রমশক্তির সাথে যুক্ত বৃহৎ খাতগুলো ব্যাপক বেকারত্বের মুখোমুখি হবে। বিলুপ্তির হুমকিতে আছে গাড়ির মেকানিক, অনুবাদক, লাইব্রেরিয়ানের মতো অনেক পেশা। এটি সত্য যে, অনেকের জন্যই এটি কর্মসংস্থানজনিত সমস্যা তৈরি করবে—সম্ভবত আপনার জন্যেও।
ওয়্যারহাউস কর্মী
ফ্রিস্কো মেইডসের জেনারেল ম্যানেজার আলবার্তো নাভারেতে বলেন, "বেজোস বেশ কিছু সাক্ষাৎকারে একাধিকবার বলেছেন যে, তিনি তার ওয়্যারহাউস সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংক্রিয় রাখতে চান। তারা এমন রোবট তৈরি করছে যা সহজেই দিনের ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে।"
তিনি ইলন মাস্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, "ইলন জানেন যে, রোবট দিয়ে কাজ করাও বেশ জটিল। ফলে, ওয়্যারহাউসগুলো কখনোই শতভাগ মানবমুক্ত হবে না। তবে, সেখানেও কাজের ধরনে পরিবর্তন আসবে।"
ট্যাক্সি ও উবার ড্রাইভারসহ অন্যান্য রাইড-শেয়ার ড্রাইভার
ফিটস্মলবিজনেস ডটকমের ক্যারিয়ার এবং কর্মক্ষেত্র বিশ্লেষক লরা হ্যান্ড্রিক বলেন, "স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলো ড্রাইভ করার জন্য ভবিষ্যতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা হবে। এছাড়া, কাকে পিক আপ এবং ড্রপ অফ করা দরকার তা সনাক্ত করতে প্রয়োজনীয় অ্যাপ ব্যবহার শুরু হবে ভবিষ্যতে।"
তিনি আরও বলেন, ক্রেডিট-কার্ডের মাধ্যমে গাড়ির ভাড়া দেওয়া হবে, যা এখনই অনেক কোম্পানি চালু করেছে।
প্রাইসিং অ্যানালিস্ট বা মূল্য বিশ্লেষক
"আমার কোম্পানিতে আমরা একটি এআই অ্যালগরিদম নিয়ে কাজ করছি যার মাধ্যমে প্রাইসিং অ্যানালিস্টের বেশ কিছু কাজ করা সম্ভব হবে," বলছিলেন মমবিচ ডটকমের ওয়েব ডেভেলপার এবং ব্লগার বেকি বিচ।
তিনি আরও বলেন, এআই-তে মেশিন লার্নিং থাকবে যাতে এটি পণ্যের খরচ এবং বাজারের ট্রেন্ড বের করতে পারে।
"এই মুহুর্তে আমাদের কাছে প্রাইসিং অ্যানালিস্টরা এক্সেল শীটের মাধ্যমে ম্যানুয়ালি এই কাজটি করছেন। কিন্তু ভবিষ্যতে এই পদগুলো না থাকার সম্ভাবনাই বেশি," বলেন তিনি।
গাড়ির মেকানিক
সেলম্যাক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা শন পোর বলেন, "আমরা সবাই টেসলার স্বয়ংক্রিয় শিল্পে দ্রুত এগিয়ে যেতে দেখছি, কিন্তু এটি কেবলই শুরু। ভবিষ্যতে মেকানিকদের কাজ হবে কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের মত। গাড়িতে কাজ করার চেয়ে কম্পিউটারে বসে কাজ করতে হবে তাদেরকে।"
যুক্তরাজ্যের ইন্সটিটিউট অফ দ্য মোটর ইন্ডাস্ট্রির একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, সক্রিয় অটো মেকানিকদের ৯৭ শতাংশই ইলেকট্রিক গাড়িতে কাজ করার যোগ্য নয়। যোগ্য বাকি ৩ শতাংশ মেকানিকের বেশিরভাগই প্রস্তুতকারকের ডিলারশিপে নিযুক্ত।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার
"অটোমেশন অবশ্যই চাকরির বাজারে একটি গুরুতর প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আমার মনে হয়, যেসব কাজে সামান্য ত্রুটি থেকে ব্যাপক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে- সেসব কাজে অটোমেশন ব্যবহার হবে বেশি," বলেন ই-কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ক্যানভাসপিপলের জেনারেল ম্যানেজার জেসন ইয়াউ।
এক্ষেত্রে প্রথমেই আসে এয়ার-ট্রাফিক কন্ট্রোলের কথা। তবে, এক্ষেত্রেও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
"প্রতিদিন প্রচুর অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয় যা একটি কম্পিউটার এখনও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নয়। কিন্তু, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে আগামী দশকগুলোতে এটিও পরিবর্তন হবে," বলেন তিনি।
ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টের সার্ভার
ইতোমধ্যেই জাপানে মানুষের চেহারা ধারণকারী রোবটরা রেস্টুরেন্টে অর্ডার নেওয়ার কাজ করে এবং রেস্টুরেন্টে খাবার সরবরাহ করে। এছাড়া রয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্ডার করার সিস্টে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকডোনাল্ডসের কথাই।
ভবিষ্যতে হয়তো রেস্টুরেন্টে রান্নার কাজ করবে কোনো মানুষ, কিন্তু তা আপনার টেবিল পর্যন্ত পৌঁছে দেবে মানুষের চেহারা ধারণকারী কোনো রোবট!
লাইব্রেরিয়ান বা গ্রন্থাগারিক
রিজিউমল্যাবের ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ রজার মাফতেন বলেন, "লাইব্রেরিয়ানের বিষয়টি কেবল কাজের স্বয়ংক্রিয়করণের সাথে জড়িত না, বরং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সাথেও জড়িত।"
আজকাল বেশিরভাগ লোকই ইলেকট্রনিক পাঠক, অর্থাৎ অডিওবুকের পাঠক। ভবিষ্যতে হয়তো লাইব্রেরি থেকে বই নিতে গেলেও আর লাইব্রেরিয়ানের প্রয়োজন পড়বেনা।
অনুবাদক
রজার মাফতেন আরও বলেন, "এমন নয় যে আমরা হঠাৎ করে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে শিখব, বরং আমাদের কাজ করে দেবে মেশিন।"
অনলাইনের অনুবাদক ওয়েবসাইটগুলো একটি কথোপকথন শোনা, অনুবাদ করা, এবং এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় অদলবদল করতে সক্ষম।
ক্যাশিয়ার
ফার্মিংডেল স্টেট কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং ট্যালেন্ট মেট্রিক্সের কনসাল্টিং এর ভাইস প্রেসিডেন্ট সাই ইসলাম বলেন, ক্যাশিয়ারের মতো চাকরিগুলো ইতোমধ্যেই পরিবর্তিত হলেও সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপিত হয়নি।
তবে, মেশিনের ব্যবহারে ক্যাশিয়ারের কাজের পরিমাণ যে কমে আসবে তা বোঝাই যায়।
ব্যাংক টেলার
আমেরিকার শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো অনুসারে, ২০২৬ সালের মধ্যে দেশটিতে ব্যাংক টেলার হিসেবে কাজ করা মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪১ হাজার কমে যাবে।
অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা থাকায় গতানুগতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন কমে আসছে। এর অর্থ হলো, কমে আসবে ব্যাংক টেলারের সংখ্যাও, বলছিলেন দ্য গ্রেট গুয়াক অফের সিইও তাসিয়া ডুস্ক।
"সময়ের সাথে সাথে আমরাই আমাদের নিজস্ব ব্যাংক টেলার হয়ে উঠব," যোগ করেন তিনি।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট