আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পাঠকালে আমি হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের সংযুক্ত ছাত্র ও পরে আবাসিক ছাত্র ছিলাম। মহসিন হলে সংযুক্ত হবার কারনই ছিল এটি তখনকার সময়ে কিছুটা আধুনিক হল ছিল। আবাসিক ছাত্র হিসাবে আমার কক্ষ নাম্বার ছিল ২৪৩। ২০২৩ সালের ১০ মার্চ হলের এলামনাই এসোসিয়েশনের পূনর্মিলনীর নিবন্ধনের জন্য হলে যাই। হলের দোতলায় উঠে আমার পুরনো কক্ষের টানা বারান্দায় গিয়ে দাড়াতেই শকড হই। প্রথমেই গনবাথরুমের বিকট দূর্গন্ধ শুধু নাকে না মস্তিষ্কে ও ধাক্কা দেয়। বারান্দা জুড়ে অসংখ্য জুতো আর স্যান্ডেল। প্রথমে কারন বুঝিনি। একটু এগুতেই একটি কক্ষের খোলা দরজা দিয়ে তাকাতে দেখি মেঝেতে ৬ টি সিংগেল তোষক বিছানো। তারপরের কক্ষগুলোর দরজায় জাতিরজনক ও বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি লাগানো। বুঝতে পারলাম যে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ কক্ষ।
তারপর যখন আমার পুরনো কক্ষ ২৪৩ এর সামনে এলাম তখন বন্ধ দরজায় নক করলাম। একজন ছাত্র দরজা খুললো। সে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক সম্মান শ্রেনীতে পড়ছে। কক্ষের মাঝখানে এক স্তুপ বিছানা-বালিশ। ৬ জনের বিছানার বাকিগুলো রোদে, ছাড়পোকা তাড়ানোর প্রচেষ্টা। কক্ষের অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ আবাসিক কক্ষ ও গনরুমে রূপান্তরিত হয়েছে, রুমে জুতো-সেন্ডেল রাখার জায়গা নাই বলেই সব বারান্দায়। নোংরা দূর্গন্ধযুক্ত কক্ষের অপরিস্কার গনবিছানায় শোয়া স্বাপ্নিক এই ছেলেদের দিয়েই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বো! প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েই আমাদের ভিসি সাহেব গর্ববোধ করেন? প্রভোস্ট, হাউস টিউটর, ছাত্র নেতৃবৃন্দ কেউ কি এগুলো ভিসি'র গোচরে এনেছেন? ইউজিসির, সরকারের? মন খুবই খারাপ হয়েছে আজ। এই সব ছেলেমেয়েদের কে আমরা ইন্টারভিউ তে কতো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি। তারা কিভাবে বেঁচে আছে তা' কখনো জিজ্ঞেস করি না!
লেখক: সাবেক অতিরিক্ত সচিব