দেশে বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সন্তোষজনক চাকরি পাওয়া নিয়ে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। সেইসাথে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা।
শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ অনুযায়ী, দেশে বেকারত্বের শীর্ষে রয়েছে রংপুর বিভাগ ৬ দশমিক ৯ ও দ্বিতীয় স্থানে বরিশাল বিভাগ ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এরপর জাতীয় বেকারত্বের মাত্রা যেখানে ৪ দশমিক ২ শতাংশ; সেখানে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ স্কোর নিয়ে বেকারত্বে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে রাজশাহী বিভাগ। দেশের সবচেয়ে কম বেকার রয়েছে ঢাকা বিভাগে যার মাত্রা ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
গত ১২ মার্চ রাজশাহীর এক হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এসব তথ্য তুলে ধরেন। “জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা রাজশাহী সংলাপ” শিরোনামে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি প্রদানের বিষয়ে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে শিক্ষা, জেন্ডার সমতা এবং কর্মসংস্থান বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
জাতীয় বেকারত্বে রাজশাহী এগিয়ে থাকার কারণ হিসেবে বাংলাদেশের সাথে রাজশাহীর শ্রমবাজারের তুলনায় দেখা যায়, দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্টী ৩৪ শতাংশ কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ কাজ করে মাত্র ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অপরদিকে দেশের ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠী শ্রমবাজারে নিয়োজিত নাই। এখানেও ৩৩ দশমিক ৬ সূচকে এগিয়ে রাজশাহী। ফলে বেকারত্বের মাত্রা বেড়েছে। এছাড়া দেশের মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে নিয়োজিত ৮৫ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ। তবে, এ সূচকে রাজশাহী ২ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছেছে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশে।
জেন্ডার পরিসংখ্যান ২০১৮ অনুযায়ী, রাজশাহী বিভাগে বিভিন্ন জেলার নারী ও পুরুষ বিদেশে কর্মসংস্থানে পিছিয়ে রয়েছে। বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে বগুড়া। সেখানে বছরে ১৩ হাজার ৪১৬ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ৪৯৩ জন নারী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। সেই তুলনায় এখানে রাজশাহী তৃতীয় এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জয়পুরহাট। এসব অঞ্চলের মানুষ বেকারত্ব ঘোঁচাতে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। অথচ রাজশাহীতে এ সংখ্যা নারী মাত্র ৮৫৭ জন ও পুরুষ ৩ হাজার ৭৪০ জন। মানুষের প্রবাসী হওয়ার প্রবণতা সূচকে নিন্মদিকে রাজশাহী।
সিপিডির তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বিভাগের ছয়টি উপজেলার ১৮৭ জন মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। তাদের বেকারত্ব ও নানান সমস্যা তুলে ধরেন, উদ্যোক্তা হয়ে বেকারত্ব ঘোঁচাতে সরকারি কোন সহায়তা তারা পান না। সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে ভোগান্তির শিকার হন, নানা অনিয়মের কারণে অনেক যোগ্য চাকরি প্রত্যাশীরা চাকরি করতে পারছেন না। ফলে বাড়ছে বেকারত্ব।
বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে মুক্ত আলোচনায় বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এরমধ্যে, শিক্ষিত বেকার জনগণকে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি সরকারি ও নন ব্যাংক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজ ঋণের ব্যবস্থা করা এবং এ সংক্রান্ত জটিলতা দূর করা। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে স্থানীয় শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া। প্রতিটি উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে লোকবল বৃদ্ধি করা। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সাথে বেতন বৃদ্ধি; ৪০ দিনের বিশেষ কর্মসূচী এবং কাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দিলে বেকারত্ব কমে আসবে বলে মনে করেন তারা।
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আলোচকরা বলেন, নির্বাচনের আগে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই বেকার সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয়। ইশতেহারে বিষদভাবে বর্ণনা করে। এমনকি ক্ষমতায় গেলে সেই প্রতিশ্রুতি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তার রূপরেখাও জানিয়ে দেয় দলগুলো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ক্ষমতায় গেলে অধিকাংশ প্রতিশ্রুতিই চাপা পড়ে যায়। ফলে বেকার সমস্যা থেকে যায় আগের মতোই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে নির্বাচনী ইশতেহারের গুরুত্ব; ইশতেহার প্রণয়নে জনগণের সম্পৃক্ততা ও লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের দিকে গুরুত্বারোপ করা হয়। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডি’র যুগ্ন পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য।
এছাড়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ডঃ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সম্মানিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র সাবেক সংসদ সদস্য মিজ জাহান পান্না, সাবেক সংসদ সদস্য রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: আব্দুল ওয়াদুদ দারা। এছাড়া অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) রাজশাহী ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী মিস সামিয়া বেগম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রাকিব আহমেদ, মহানগর সুজনের সভাপতি মোঃ পিয়ার বক্স উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: সিপিডি