ভালবাসার কাছে মরণব্যাধি ক্যান্সারও বাধা মানেনি। বাধা হয়নি হাসপাতালের বেড। মৃত্যুপথযাত্রী ফাহমিদার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন প্রেমিক মাহমুদুল। চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে এই ব্যতিক্রম বিয়ের খবর ও ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করা ফাহমিদার স্বপ্ন ছিল প্রেমিক মাহমুদুলের সঙ্গে ঘর বাঁধার। কিন্তু শরীরে ক্যান্সার বাসা বানানোর পরও তার সেই স্বপ্ন ফিকে হতে দেননি মাহমুদুল। বিয়ে করে স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি।
গত বছরের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ বাকলিয়ার চর চাক্তাই এলাকার মেয়ে ফাহমিদা আক্রান্ত হন রেকটাম ক্যান্সারে। বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশে চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সারের সাথে লড়াই চলে তার। ভারতে চিকিৎসা করে ফিরলেও শারীরিক অবস্থার উন্নতির বদলে আরও অবনতি হতে থাকে। ফলে নেওয়া হয় বেসরকারি একটি হাসপাতালে। এই অবস্থাতেই ফাহমিদাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার সন্তান মাহমুদুল।
গত ৯ মার্চ উভয় পরিবারের সিদ্ধান্তে হাসপাতালের কক্ষে তাদের বিয়ে হয়। বধুবেশে লাল শাড়িতে ফাহমিদা ও পাঞ্জাবি পরা বর মাহমুদুলের সেই ছবিই সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
একপ্রকার মনের জোরে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নিজেদের জিম্মায় সোমবার বাড়ি ফিরলেও শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার ভোরে ফাহমিদাকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। বর্তমানে তিনি জিইসি মোড়ের বেসরকারি মেডিকেল সেন্টারের একটি কেবিনে অনকোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মো. ইউসুফের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন।
ফাহমিদা ও মাহমুদুলের অন্য রকম এই বিয়ের খবর ও ছবি ফেইসবুকে দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন সাকী। তিনি সম্পর্কে ফাহমিদার নানা।
সাকী বলেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুপথযাত্রী কাউকে বিয়ে করার ঘটনা বিরল। এতে বর-কনে উভয়ের ভালোবাসার দিকটিই উঠে এসেছে। আমি তাদের জন্য শুভ কামনা জানাই।
এস এম কামাল উদ্দিনের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে ফাহমিদা দ্বিতীয়। তার বড় বোন চীনে থাকেন। ছোটভাই এখনও পড়ালেখা করছেন। ২৬ বছর বয়েসী ফাহমিদা চট্টগ্রামের বেসরকারি চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেন।
তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জা না যায়, শিক্ষাজীবনেই ঢাকার নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করা মাহমুদুলের সঙ্গে ফাহমিদার পরিচয় হয়। দুই পরিবারের মধ্যে তাদের সম্পর্কের বিষয়ে জানাজানি ছিল। তাদের বিয়ের কথাবার্তাও ২০২০ সালের শেষ দিকে হয়। কিন্তু গত বছরের জানুয়ারি মাসে ফাহমিদার রেকটাম ক্যান্সার ধরা পড়ে।
ফাহমিদার বড় চাচা মো. ইউসুফ সালাম বলেন, প্রথমে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল ফাহমিদাকে। পরে কলকাতার টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপিসহ নানা ধরনের চিকিৎসা চলে। কিন্তু তাতেও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। গত ৪ মার্চ ফাহমিদাকে ভারত থেকে চট্টগ্রামে এনে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
তিনি বলেন, তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। এর মধ্যে মাহমুদুল তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সে তার পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে আমাদের পরিবারকে বিয়ের প্রস্তাব জানায়। আমরা তাকে ও তার পরিবারকে ফাহমিদার শারীরিক পরিস্থিতি এবং পূর্ণভাবে সুস্থ না হবার বিষয়টি জানিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা বলি। এরপরও মাহমুদুল তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে গত বুধবার বিকালে হাসপাতালের কেবিনেই তাদের আনুষ্ঠানিক বিয়ে দেওয়া হয়।”
ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে মাহমুদুল ও ফাহমিদাকে বর-বধু বেশে হাসিখুশিই দেখা গেছে। এসময় ফাহমিদার নাকে অক্সিজেনের নল লাগানো ছিল।
ইউসুফ সালাম বলেন, একজন উচ্চ শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত ছেলে শুধু ভালোবাসার টানেই মৃত্যুপথযাত্রী ফাহমিদাকে বিয়ে করেছে। সে আমাদের বলেছে, প্রয়োজনে বিয়ে করে একদিন হলেও তার (ফাহমিদা) সাথে সংসার করবে। এ ধরনের মানসিকতার ছেলে পাওয়া খুবই বিরল।
বিয়ের কয়েকদিন পর সোমবার ফাহমিদা হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসতে চায়। পরে তাকে বাকলিয়ার বাসায় নেওয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার ভোররাতেই আবারো তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে হাসপাতালে ফেরত নেওয়া হয়।
মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক ডা. শাহেদ পারভেজ খান বলেন, গত ৬ মার্চ থেকে ক্যান্সার আক্রান্ত মেয়েটি ভর্তি হয়েছিল। সোমবার তার পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছাতে বন্ড সাইন দিয়ে বাসায় নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে তাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ততটা ভালো নয়। তাকে বর্তমানে এক ধরনের কেমেথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা চলছে।
।