চারিদিকে শুধু ধান আর ধান। মাঠ জুড়ে হলুদ বর্ণে সেজেছে ধান গাছ। ধান গাছের শীষে ঝলমল করছে সোনালী ধান। মাঠে মাঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে ধানের শীষ। সেখানে কৃষকের স্বপ্নের সোনালী ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন নিয়ে প্রহর গুনছেন। কখন তারা ঘরে আনবে সোনালী ফসল, এ আনন্দে ধান কেটে নেওয়ার জন্য ছুটাছুটি করছে তারা। প্রতি বছর কৃষক তাদের রোপন করা স্বপ্নের সোনালী ফসল ধান কেটে আলু চাষ করে থাকেন। তাই এ সময়ে খুব ব্যস্ত সময় পার করেন তারা।
কিন্তু, এ বছর শেষের দিকে বৃষ্টির হওয়াতে ধানের এসব জমির মাটি নরম থাকায় ধীর গতিতে চলছে ধান কাটার কাজ। তার পরেও অনেকে এ বাধা অপেক্ষা করে তাদের জমিতে আলু লাগানোর জন্য উৎপাদিত ফসল ধান কেটে ঘরে তুলছেন। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় চলতি মৌসুমে কৃষকের কাঙ্খিত স্বপ্নের এ রোপা আমন মৌসুমে ধানের ভাল ফলন পেয়ে খুশি হলেও বীজ আলুর সংকটে তার অখুশি।
সরজমিনে উপজেলার উদয়পুর, মাত্রাই, আহম্মেদাবাদ, পুনুট ও জিন্দারপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত জোড়া সবুজ আর হলুদ রঙে সেজেছে রোপা আমন ধানের ক্ষেত। ধানের ম-ম গন্ধে ভরে উঠেছে গ্রামীণ জনপদ। এখন মাঠ জুড়ে ধানের সোনালী রঙ ধারণ করেছে।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছেন, জমিতে চারা লাগানোর পর থেকেই কৃষকেরা ভালো ফলনের আশায় সময়মতো নিবিড় পরিচর্যা, সার, সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন। এ কারণে আবাদও ভালো হয়েছে। এছাড়াও এবার ক্ষেতে তেমন কোনো রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও নেই। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে কৃষকেরা পরিতৃপ্ত। এখন শুধু অপেক্ষার পালা নিরাপদে ধান ঘরে তোলার। কয়েক দিনের মধ্যে মাঠের সব সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষকের শূন্য গোলা।  মোটামুটি ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। 
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবার চলতি রোপাআমন মৌসুমে ১১হাজার ৯শ ৫০হেক্টর জমিতে ধান রোপন হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান রোপন হয়েছে ৮শ ৫০ হেক্টর জমিতে এবং উফশী জাতের ধান রোপন হয়েছে ১১হাজার ১শ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে ১০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।
উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নে জমিনপুর গ্রামের কৃষক আঃ হাকিম  বলেন, এবার ৬ বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছি। ফলনও ভালোই হবে বলে আশা করছি । তবে, বীজ আলুর অবস্থা দেখে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আগামী বছর থেকে যাতে বীজ আলুর সংকট না হয় এ জন্য কালাই উপজেলায় অধিক পরিমানে বীজ আলু বরাদ্দের দাবি জানান তিনি। 
গ্রামতলা গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, ধানের ফলনে ও বাজারে ধানের দাম খুশি। তবে বীজ আলুর সংকট ও দামে  খুশি হতে পারছিনা। প্রতি বছরের আমরা ধান কেটে বাজারে বিক্রি করে আলুর বীজ ক্রয় করে থাকি। এ বছর আগে থেকেই বীজের সংকট। এ রকম  হলে কৃষকের অস্তিত্ব থাকবে না। তাই কালাই উপজেলায় যাতে আর আলুর বীজ সংকট না হয় সেদিকে সরকারের নজর দেওয়া জরুরী। 
আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের ঝামুটপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মোত্তালেব বলেন, ধান আর আলু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত কালাই উপজেলা।  এ উপজেলা কৃষকরা অফিসের টিস্যু কালচার বীজ ব্যবহার করে আশ্বস্ত হন। এবং অধিক ফসল উৎপাদন করে থাকেন। তাই তারা তাদের রোপণকৃত আলু থেকে বীজ রাখেন না। তাই বীজ আলু সংগ্রহে কৃষক সমস্যার সম্মুখীন হলে দেশে আলুর ঘাতটি আরও বেশি হবে। কালাই উপজেলায় বীজ আলুর সংকটে না পড়ে এজন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তিনি। 
মাত্রাই ইউনিয়নের ইন্দাহার গ্রামের জাইদুল ইসলাম বলেন, ধান উৎপাদন নিয়ে আমরা যেমনটি ভাবি তেমনটি উৎপাদন নিয়েও ভাবি । এ উপজেলার উৎপাদিত আলু দিয়ে দেশের অর্ধেক ঘাটতি পূরণ হয়। অথচ সেখানে বীজ আলুর সংকট, এটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়ার মত নই। তাই সরকারের উচিত কালাই উপজেলায় অধিক বরাদ্দ দেওয়া। যাতে কৃষকদের আলু উৎপাদনে ব্যর্তই না ঘটে।
কালাই উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, ইতিমধ্যে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ফলনও অনেক ভাল হচ্ছে। যেসব জমির ধান ৯০ ভাগ পেঁকে গেছে ওইসব জমির ধান কেটে নিতে  কৃষককে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছি। তাছাড়া আমাদের মাঠ পর্যায়ে কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তাগণ কৃষক পর্যায়ে নানা ধরণের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। আগামীতে এ উপজেলায় আলুর বীজ নিয়ে যেন কৃষকদের অস্থিরতা সৃষ্টি না হয় বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে ।