রাজধানী ঢাকার এতিহ্যবাহী দুই স্থাপনা রূপলাল হাউজ ও আহসান মঞ্জিলের সৌন্দর্য ফেরাতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বহির্বিশ্বের আদলে নদী থেকেই যেন দর্শনার্থীরা এ দুটি পুরাকীর্তির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এজন্য নদীতীরবর্তী স্থাপনা অপসারণের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) চিঠি দেয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা এ বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, ডিএসসিসির নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদের স্বাক্ষর করা একটি চিঠি এরই মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বরাবর পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ঊনবিংশ শতকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে সূত্রাপুরের ফরাশগঞ্জ এলাকায় প্রায় ৫২ মিটার দীর্ঘ একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন দুই ভাই রূপলাল দাস ও রঘুনাথ দাস। তখন এ ভবনটির নাম দেয়া হয় রূপলাল হাউজ। কারুকার্যখচিত দুইতলাবিশিষ্ট ভবনটির স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত মনোরম ও মনোমুগ্ধকর। সম্প্রতি ডিএসসিসির মেয়র ফজলে নূর তাপস ভবনটি পরিদর্শন করেন ও এটি সংস্কার করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা করেন। পাশাপাশি আহসান মঞ্জিলের সামনের নদীতীরবর্তী স্থাপনাগুলোও অপসারণ করার প্রয়োজনীয়তার কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে আইনি কোনো বাধা নেই বলেও চিঠিতে জানায় ডিএসসিসি। সেখানে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন নগরীর ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থানগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে পারবে। এছাড়াও সাধারণ মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধার ব্যবস্থা নিতে পারবে বলেও আইনে বলা আছে। মূলত এ আইনের ওপর ভিত্তি করেই ডিএসসিসি ঐতিহাসিক স্থাপনা দুটির সামনে থেকে সব ধরনের স্থাপনা সরিয়ে ফেলতে বিআইডব্লিউটিএকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছে।
এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগের সঙ্গে আমরা পুরোপুরি একমত। এজন্য আমরা সদরঘাটের একাংশ অর্থাৎ রূপলাল হাউজের সামনে থেকে তিনটি জেটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর আহসান মঞ্জিলের সামনে থেকেও অবকাঠামো অপসারণ করা হবে। এছাড়াও সদরঘাট বেশির ভাগ সময় ভীষণ জনাকীর্ণ থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর একাংশ পোস্তগোলা শ্মশানঘাটে সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে। সেটি বাস্তবায়ন করা গেলে এ অঞ্চলের ওপর চাপ কমবে। যাত্রীরাও স্বস্তি পাবেন আবার এ এলাকায় যে ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে, সেটির দর্শনার্থীদেরও সুবিধা হবে।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদজানিয়েছেন, রূপলাল হাউজ ও আহসান মঞ্জিলের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, করপোরেশনে নিজস্ব তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে চলতি অর্থবছরেই এ কাজ শেষ হবে।