জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে একদিনে ভোট গ্রহনের পরিবর্তে একাধিক দিনে ভোট গ্রহন করার প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি-আরএফইডি কর্তৃক আয়োজিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কেমন চাই শীর্ষক সেমিনারে তিনি এই প্রস্তাব করেন।
তার প্রস্তাবে ব্যাখ্যা দিয়ে ড . মাসুদ বলেন, ৩০০ আসনে একই দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ফলে নির্বাচন কমিশন সহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা ও স্বদিচ্ছা থাকলেও সকল আসনের নির্বাচন মনিটরিং বা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না। ফলে প্রার্থীরা সুযোগ কাজে লাগিয়ে কেন্দ্র দখল সহ ভোট চুরির নানা রকমের অপকর্মে লিপ্ত হয়। তাই একদিনের পরিবর্তে বিভাগ বা অঞ্চল ভাগে একাধিক দিনে ভোট গ্রহন করলে সুষ্ঠ ও জবাদিহিতা মূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব ও সহজ হবে। ড. মাসুদ আরো বলেন, সরকারি কর্মচারী অবসরের পরে ৩ বছর নির্বাচনে অংশগ্রহনের সুযোগ না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কঠোর হতে হবে। নির্বাচন কমিশন সহ যে কোন কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা ও প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে একটি সার্চ কমিটি দ্বারা কমিশন গঠন করতে হবে। এতে সরকার দলের একক কোন প্রভাব থাকবে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন র্নিদলীয় করারও প্রস্তাব করেন ড. মাসুদ। এছাড়াও জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) সেবা কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধিনে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিনে নিয়ে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সহ আওয়ামী লীগের দোসররা জনগণের তথ্য বিদেশিদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। জনগণের তথ্য বিক্রি করে দেওয়া দেশ বিক্রি করে দেওয়ার সামিল।
ড. মাসুদ আরো বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেনি। পুরো রাষ্ট্রকে শেখ হাসিনা নিজের হাতের মুঠোয় ধরে রাখতে রাষ্ট্রের সকল বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে। উন্নয়নের রোল মডেলের নামে দুর্নীতির রোল মডেলে দেশকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় মহাজোট করেছে, সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আনুপাতিক বা সংখ্যানুপাতিক হারে করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন। এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র সংস্কারে ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করেছে। রাষ্ট্র সংস্কারে এসব দাবি পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সহযোগিতা চাইলে জামায়াতে ইসলামী সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকবে।
রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি-আরএফইডি’র সভাপতি একরামুল হক সায়েমের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবীরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বস্ত্র ও পাট এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রি.জে (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। অনুষ্ঠিত সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সিপিডি’র সাধারন সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, প্রথম আলোর যুগ্ম বার্তা সম্পাদক সোহরাব হাসান, ছাত্র প্রতিনিধি আরিফুর রহমান নাদি সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।