দেশের তৃতীয় জি আই স্বীকৃতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আমের অনেক পুরতন।প্রায় দুই শ বছর আগে ময়মনসিংহের মহারাজা সুতাংশু কুমার আচার্য্য বাহাদুর চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গড়ে তোলা বিশাল আম বাগানের অন্যান্য জাতের মধ্যে খীরসাপাত চাষ হতো। এ জাতের আমটি অত্যন্ত সুস্বাদু। যা জেলার উৎপাদিত আমের ৩০ শতাংশই খীরসাপাত আম এবং দেশ সহ বিশ^ বাজারেও সুনাম কুড়িয়েছে। কৃষি বিভাগের ভাষ্য মতে নতুন পদ্ধতিতে একই গাছে কাটিমনের সাথে খীরসাপাত আম উৎপাদন করতে পারলে মৌসুম থেকে প্রায় তিনগুণ দাম বেশী পাওয়া যাবে।ফলে চাষীরা অধিক লাভবান হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে প্রতিবছর ৩৫ হাজার টন খিরসাপাত আম উৎপাদিত আমের মধ্যে বেশীর ভাগই উৎপাদন হয় শিবগঞ্জে।
নতুন পদ্ধতিতে শিবগঞ্জ উপজেলার ভাঙ্গাব্রিজ এলাকার আম চাষি সজিব আলীর বাগানে একই গাছে কাটিমন আমের সাথে সাথে খীরসাপাত আমের চাষ করছেন। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সজিবের আম বাগানে কাটিমন আমের সাথে সাথে গাছে ঝুলছে খীরসাপাত আম। পরিচর্যায় সময় পার করছেন সজিব ও তার সাথে থাকা শ্রমিকরা। তিনি বলেন বর্তমানে খীরসাপাত বাগানেই মণ প্রতি ১৩-১৫ হাজার টাকা দরে ক্রয় করতে চাইছে । তবে এখনো বিক্রী করিনি। সামনে আরো ভাল দাম পাবো বলে আশা করছি। সজিব আলী আরো বলেন, ৩ বছর আগে ৪ বিঘা বর্গা নিয়ে খিরসাপাত আমের চাষ শুরু করেছিলাম। পরে খিরসাপাত আমের দাম না পেয়ে জাত পরিবর্তন করে কাটিমন করা হয়। এখন কাটিমন আম গাছে ধরে আছে।এরই মধ্যে দেখছি কিছু কিছু গাছে খিরসাপাত আমের জাতের ডাল থেকে গেছে। ডালগুলোতে এখন আম এসেছে। তিনি আরও বলেন,কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে শেষ মৌসুমেও আম হয়েছে। প্রথমে দেখে বিশ্বাস হচ্ছিল না।আমগুলোর দাম অনেক। ১২-১৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এ সময় যদি খিরসাপাত আম ধরানো যায়। সিজনের থেকে প্রায় তিন-চার গুণ বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। পরীক্ষামূলকভাবে এটি করে দেখছি। আশা করছি অসময়েও উৎপাদন করতে পারবো।
আনারুল নামের এক আম চাষি বলেন,আমাদের বাগানের পাশেই এই আম বাগান। কাটিমন গাছের জাতের সঙ্গে সঙ্গে খিরসাপাত আমও হচ্ছে, তাই দেখতে এসেছি। আমার সিজনাল আমের গাছ আছে কিন্তু আম ধরে না। তাই জাত পরিবর্তন করতে চাচ্ছি।শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন,আগে চাষিরা জানতো না এ সময়ে খিরসাপাত আম উৎপাদন করা যায়। খিরসাপাত গাছে কাটিমন জাতের ডাল গ্রাফটিং করা হয়েছিল। পূর্বের ডালের শিকড় বের হয়ে আম ধরছে। আর কলম করা ডালে তো কাটিমন আম আছেই। তাই চাষিরা এখন পরীক্ষামূলক ভাবেই খিরসাপাত অসময়ে ধরানোর চেষ্টা করছে। এ পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে আম সেক্টরকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবে এগিয়ে আসতে হবে কৃষি বিভাগকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ পলাশ সরকার বলেন,কয়েক বছর থেকে অসময়ে আশ্বিনা আম উৎপাদন হচ্ছে। তবে খিরসাপাত এখনো বাণিজ্যিকভাবে হয়ে ওঠেনি। তবে চাষিরা ব্যাপক চেষ্টা করছেন। মূলত সিজনে আমের মুকুল ভেঙে দিয়ে কিছুদিন পরে প্যাকলোবিউটাজল নামক রাসায়নিকের মাধ্যমে অসময়ে আমের মুকুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছেন চাষিরা।