সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কৃষি জমির টপ সয়েল ও নদী ভাঙ্গন ঝুঁকির মুখে অবৈধ ড্রেজারে মাটি বিক্রির পর এবার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বিলের মাটি বিক্রির মহোৎসব। অনাকাঙ্ক্ষিত এই অনিয়ম প্রকাশ্যে চলছে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায়। অর্থলোলুপ স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মাটি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার দলীয় প্রভাবশালী একাধিক চক্র। দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে মাটি বিক্রি করছে ঘিওর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান রনি ।
জানা গেছে, কৃষি জমি সুরক্ষায় সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও ঘিওরে তা মানা হচ্ছে না। উল্টো কৃষি জমি ও জলাভূমি বিনষ্ট করে অগণিত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মহোৎবে মেতে উঠেছে ওই চক্র।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মাটি বিক্রির হিসাব নিকাশের জন্য বিলের একপাশে টিনের ছাপরা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শুভ আহমেদ টুকুন মাটি বিক্রির রশিদ সংরক্ষণ করছেন। মাটি উত্তোলনে নিয়োজিত রয়েছে ভেকু ও ড্রেজার মেশিন। প্রতিনিয়ত মাটি উত্তোলন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিনে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে নির্মাণাধীন আঞ্চলিক মহাসড়কে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘিওর উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নীলুয়া জলমহাল ইজারা নিয়ে মাটি ব্যবসা শুরু করেছে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান রনি। জলমহাল সংস্কারের নামে ভেকু ও ড্রেজার মেশিন বসিয়ে মাটি কেটে দেদারছে বিক্রি করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘিওর উপজেলার পয়লা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, নীলুয়া বিল দেশী মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। অথচ এই বিল থেকে মাটি কেটে আরিচা- টাঙ্গাইল ভায়া ঘিওর-দৌলতপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিইসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে ছাত্রলীগ সভাপতি রনি ও তার সহযোগীরা। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ হলেও কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ঘিওর উপজেলার একাংশ এবং দৌলতপুর উপজেলার কিয়দাংশ নিয়ে নিলুয়া জলমহাল। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা এই জলমহলটি সকলের কাছে নিলুয়া বিল হিসেবে সুপরিচিত। এক সময় দেশি মাছের অভয়ারণ্য বিলটি এখন ভূমি দস্যুতের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। চিরচেনা স্বীকৃত এই বিল (জল মহাল) থেকে মাটি বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে উপজেলা প্রশাসনের নিকট থেকে তিন বছরের জন্য ইজারা নেওয়া হয়েছে বলে লোকমুখে শুনেছি।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ শুভ আহমেদ টুকুন বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি রনি পাচঁ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে জলমহাল ইজারা নিয়েছে। জলমহাল সংস্কারের অনুমতি আছে ইউএনও'র। সংস্কারের অনুমতির কাগজ দেখতে চাইলে তিনি বলেন, সভাপতির কাছে কাগজ আছে। প্রয়োজনে ইউএনও অফিসে খোঁজ নিতে পারেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও জলমহালের ইজারাদার মেহেদী হাসান রনি বলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আমিনুল ইসলামের অনুরোধে কাজটি নিয়েছি। তবে এখনো লাভের মুখ দেখিনি।
এবিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান বলেন, শুনেছি ইউএনও নিজেই জলমহাল ইজারা দিয়েছন। এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত কিছুই জানিনা।
ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, নিলুয়া বিল একটি স্বীকৃত জলমহাল। সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে বিধি মোতাবেক ওই জলমহাল তিন বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে।