কুটির শিল্পের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ধরনের নক্শী কাঁথা ও আচার ও কুমড়া বুড়ি নিজ হাতে তৈরী করে বিক্রী করে মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় করার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে নারী উদ্যোক্তা শামীমা খাতুন। শামীমা খাতুন হলো জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নের ধোবড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলেপ আলি টিসুর মেয়ে ও শিবগঞ্জ পৌরসভাধীন দৌলতপুর মহাজন পাড়ার সামীমুল ইসলামের স্ত্রী।
গত বৃহস্পতিবার সরজমিনে তার নিজ বাড়িতে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, ১০ বছর আগে নক্শী কাঁথা সেলাই করার কাজ শুরু করি। তখন কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই পারিবারিক শিক্ষাকে পুঁজি করে শুরু করলেও পরবর্তীতে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিউলী বেগমের নেতৃত্বে জাতীয় মহিলা সংস্থায় প্রশিক্ষণ নিয়েছি। বর্তমানে আমি ২৫ জন অসহায় ও বেকার মহিলাকে সংগে নিয়ে নক্শী কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করি। মান অনুসারে কাঁথাগুলো সেলাই করতে নিম্নে ১৫ দিন ও উর্দ্ধে আড়াই থেকে তিন মাস সময় লাগে। পারিশ্রমিক দিতে হয় ছয় শ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা। বিক্রি করি দুই হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকায়। কাঁথাগুলো বিভিন্ন ধরনের নাম রয়েছে। যেমন শুজনী কাঁথা, বকুল কাঁথা,কার্বেট কাঁথা,এসি কাঁথা,স্টিক কাঁথা,হাসোরী কাঁথা,পিটাফুল কাঁথা,খেজুর পাতা, বিস্কুট কাঁথা সোজাফোঁড় সহ প্রায় ১৫ধরনের কাঁথা।এ ব্যবসা অনলাইনও অফ লাইনে দুই ভাবে করা যায়।
অনলাইনে কাঁথাগুলো জেলার বাইরে সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের মেলা ও অর্ডারে বিক্রী করা হয়। কাঁথা গুলো তৈরী করতে বর্তমানে ২৫ জন বেকার ও অসহায় মহিলা কাজ করে। প্রতিমাসে গড়ে ১৫/২০টি কাঁথা বিক্রী করতে পারি। আয় হয় প্রায় ২০হাজার টাকা। ভবিষ্যতে আয় বাড়বে। কারণ কাজের পরিধি দিন দিনি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া আমি নিজ হাতে আম থেকে আম্চুর,আমতা(আমস্বসত্ত) জলপাইয়ের আচার, তেঁতুলের আচার,আমের আচার, রসুনের আচার,চকলেটআচার, বরের আচার সহ প্রায় ১৫ধরনের আচার ও কুমড়া বড়ি নিজ হাতে তৈরী করে অনলাইনে ও অফলাইনে বিক্রী করে থাকি। কুমড়া বড়ি কেজি প্রতি ১৪ শ টাকা, চকলেট আচার ৭ শ টাকা কেজি, রসুনের আচার ১৪শ টাকা কেজি, বরের আচার ১১শ টাকা কেজি সহ বিভিন্ন আচার বিভিন্ন দরে বিক্রী করি। আচার বিক্রী করে খরচ বাদে প্রতিমাসে আয় করি ২০হাজার টাকা ।
শামীমা খাতুন তার প্রতিক্রিয়ার বলেন, লেখাপড়া করার পাশাপাশি আমি কুটির শিল্পের অন্তর্ভুক্ত নক্শী কাঁথা ও আচারের ব্যবসা করে নিজেকে স্বাবলম্বী হতে পেয়ে নিজেকে গর্ববোধ করি।এ ব্যবসার আয় দিয়েই আমার দুই সন্তানকে লেখাপড়া করাচ্ছি, নিজেও লেখাপড়া শেষ করতে চলেছি। তাছাড়া সংসারের খরচতো আছেই। তাই চাকুরী পিছনে না ছুটে আমি আমার এ ব্যবসাকেই সম্প্রসারণ করবো। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দৈনিক ইত্তেফাকের জেলাা প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা তসলিম উদ্দিন বলেন কুটির শিল্প শুধু শিবগঞ্জের নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য। এ কাজ করে এ সময় অনেক মহিলা সংসার চালাতো। বর্তমানে এ চাহিদা ব্যাপক। সরকারী ভাবে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিলে নক্শী কাঁথা ও আচার তৈরী করেই হাজার হাজার অসহায় ও বেকার মহিলাদের কর্মসংস্থান হতে পারে।
শিবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিউলী বেগম জানান,আমি দীর্ঘদিন যাবত উপজেলার অসহায় ও দু :স্থ বেকার মহিলাদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। যেখান থেকে শামীমা প্রশিক্ষণ নিয়ে শুধু নিজ্ েস্বাবলম্বী হয়নি সংগে আরো ২০/২৫জনকে স্বাবলম্বী করতে চেষ্টা করছে। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: উজ্জল হোসেন বলেন শামীমা খাতুন কুটির শিল্পের অন্তর্ভুক্ত নক্শী কাঁথা ওবিভিন্ন ধরনের আচার তৈরী করে স্বাবলম্বী হয়ে শিবগঞ্জে ইতিহাস সৃৃষ্টি করেছে।আমরা উপজেলার পক্ষ থেকে এগুলোর সম্প্রসারনের জন্যপ্রতিবছরই বিভিন্ন মেলাও প্রদর্শণীর ব্যবস্থা করে থাকি। ফলে কুটির শিল্পের সম্প্রসারন ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে আরো সম্প্রসারণ হবে।