সোমবার। ভোর ৫ টা ১৭ মিনিট। অজানা সংকেতে ঘুম ভেঙ্গে গেল । পাশ থেকে পিয়াস বলল, জেসি কয়টা বাজে। বুঝলাম পিয়াসও জেগে গেছে ছেলের টেনশনে। ।
ও বলল, বাবা বলেছে আজ ৫:৪৫ এ ডাকতে, আজ পনেরো মিনিট বেশি ঘুমাবে।
আমি তবুও ছেলের রুমে যাই। দেখি ওঠে গেছে। তাড়া দেই। কারণ
আজ বাবার (আমরা দুজন এখনো বাবাই ডাকি) নতুন একটি দায়িত্ব গ্রহণের দ্বিতীয় দিন। আমার জন্য খাবার তৈরি করো মা- বলে ছেলে চোখ বুজল আবার।
৫.৪৫ মিনিট। ছেলে উঠে আপন গতিতে রেডি হতে লাগলো। বাবাকে একটা পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করতে দিল। আমি ছেলের রেডি হওয়ার ফাঁকেই হালকা নাস্তা মুখে তুলে দিলাম। দুধের গ্লাস দিলাম। প্রিয় বুটটি দ্রুত পরতে পরতে অর্ধেকটা খেল। সিঁড়িতে পা দেয়ার আগে মনে হল আমাকে আদর করা হযনি। ছুটে এসে কয়েক মুহূর্ত জড়িয়ে ধরে রাখতেই মনটা হুহু করে উঠল আমার। কেন সন্তান আজীবন বুকে থাকে না?
বাবা-ছেলে বেরিয়ে গেছে। আমার ফাঁকা লাগছে। পিয়াস ফিরে এসে বলে, জানো কী হয়েছে। গাড়ির কাছে যাওয়ার আগে ছেলে আমাকে বলে, বাবা তুমি একটু দূরে থেকো। তুমি পাশে থাকলে আমাকে ছোট দেখাবে। আমি চাই না কলিগরা আমাকে ক্যাজুল করুক।
ভাবি, যে ছেলেকে এখনো তিনবেলা মুখে তুলে খাইয়ে দিতে হয়, সে এখন অন্যের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছে । কখনো খুশিতে মনটা ভরে উঠে। মনে হয় প্রজাপতির রঙিন ডানায় উড়ে বেড়াচ্ছি আবার কখনো কষ্ট করে মনটা কেঁদে ওঠে। আমার এত ছোট বাচ্চা এখনই চাকরিতে ঢুকলো। জীবন সংগ্রাম অবেলায় শুরু করে দিল!
বিকালে কোর্ট থেকে তড়িঘড়ি বাসায় আসি। ছেলের পছন্দের খাবার রাঁধতে হবে। ছেলে বাসায় ফিরে হাতমুখ ধুয়েই সেই আবদার, মা খাইয়ে দাও। দিলাম যথারীতি । রাতে বাবা বাসায় ফিরতেই নতুন কর্মস্থলের কত গল্প!
এতকিছুর পরেও আমার মনে হলো, বাবা তুমি নিজেকে যত বড়ই ভাবো তুমি আমাদের সেই বাবাই আছো। ছোট্ট। আদরের। ভালোবাসার।
বাবামায়ের চোখে সন্তান কোনদিন বড় হয় না। (ফেসবুক থেকে নেয়া)।