সারাবিশ্বে সর্বোচ্চ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের একটি হিসেবে বিবেচিত হয় কিউয়ি ফল। অন্যান্য ফলের চেয়ে একেবারেই অন্য ধরনের স্বাদ এবং এর উচ্চ পুষ্টিমূল্যের জন্য পাশ্চাত্যের দেশসমূহে কিউয়ি খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। আমাদের দেশে এটি খুব বেশি পরিচিত না হলেও একেবারেই যে পাওয়া যায় না, তা নয়। বড় বড় কাঁচাবাজার এবং সুপার শপগুলোতে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন চমত্কার স্বাদের এই ফলটি।
কিউয়ি নিউজিল্যান্ডের ফল হিসেবে পরিচিত হলেও এর আদি নিবাস চীনের দক্ষিণাংশে। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে মিশনারিদের মাধ্যমে কিউয়ি চীন থেকে নিউজিল্যান্ডে আসে এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে ইটালি, গ্রিস ও ফ্রান্সে। ১৯০৬ সাল থেকে কিউয়ি বহির্বিশ্বে পরিচিতি লাভ শুরু করলেও বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ করা শুরু হয় ১৯৩৭ সালে।
কিউয়ি ফলের উপরে বাদামি, রোমশ আবরণ এবং ভেতরটা উজ্জ্বল সবুজ রঙের খাদ্যযোগ্য অংশ। ফলের ভেতরে ছোট ছোট কালো রঙের বীজ থাকে। বাহ্যিকভাবে কিউয়ি ফল দেখতে অনেকটা নিউজিল্যান্ডের কিউয়ি পাখির মতো বলে এর এই নামকরণ করা হয়েছে। তবে অতীতে এই ফল আরো কয়েক নামে পরিচিত ছিল। যেমন ওয়ান্ডার ফ্রুট, হেয়ারি ব্রাশ ফ্রুট, ভাইন পের, সানি পিচ, উড পের ইত্যাদি। ১৯৫০ সালে অকল্যান্ডের একটি প্যাকেজিং কোম্পানি মেলনজাতীয় ফলের উচ্চকর এড়ানোর জন্য একে কিউয়ি নামে রপ্তানি করে। সেই থেকে ফলটি কিউয়ি নামেও পরিচিত। নিউজিল্যান্ড ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কিউয়ি পাওয়া যায়।
ভিটামিন সি ছাড়াও কিউয়ি ফলে রয়েছে আরো অনেক প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান, যা মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কিউয়ি ফলের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে -
এনার্জি- ৬০ কিলোক্যালরি
কার্বোহাইড্রেট- ১৪.২৩ গ্রাম
চিনি- ১০.৯৮ গ্রাম
খাদ্যআঁশ- ২ গ্রাম
ফ্যাট- ০.৫৬ গ্রাম
প্রোটিন- ১.২৩ গ্রাম
থায়ামিন- ০.০২৪ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লেভিন- ০.০৪৬ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন- ০.২৮ মিলিগ্রাম
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড- ০.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬- ০.০৫৭ মিলিগ্রাম
ফোলেট- ৩৪ আইইউ
ভিটামিন সি- ১০৫.৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ই- ১.৪৫ আইইউ
ভিটামিন কে- ৫.৫ আইইউ
ক্যালসিয়াম- ২০ মিলিগ্রাম
আয়রন- ০.২৯ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম- ১৪ মিলিগ্রাম
ম্যাংগানিজ- ০.০৫৮ মিলিগ্রাম
ফসফরাস- ২৯ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম- ৩১৬ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম- ৩ মিলিগ্রাম
জিংক- ০.১০ মিলিগ্রাম
কিউয়ি ফলে উপস্থিত এসব খাদ্য উপাদান স্বাস্থ্যরক্ষায় বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। যেমন -
* কিউয়ি ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি রেডিকাল ক্ষতির হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
* কিউয়িতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করার জন্য খুবই দরকারী।
* নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে জানা যায় যে, প্রতিদিন ২-৩ টি করে কিউয়ি ফল খেলে রক্ত জমাটবাঁধার প্রবণতা কমে যায়, রক্তে ফ্যাটের পরিমাণ কমে আসে। ফলে হার্টের নানা রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
* কিউয়ি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
* কিউয়িতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। কিউয়িতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়ামও হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
* কিউয়িতে ল্যুটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। ল্যুটিন চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে ও বয়সজনিত কারণে চোখের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
* কিউয়ির ভিটামিন বি, ই ও সি ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
* কিউয়িতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট, যা রক্তকণিকা তৈরিতে অপরিহার্য। তাই গর্ভবতী মায়ের খাদ্যতালিকায় কিউয়ি ফল রাখলে তা খুবই উপকার দেবে। এর অন্যান্য খাদ্য উপাদান নিরাপদ গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করে এবং পাশাপাশি এটা গর্ভস্থ শিশুর জন্যেও উপকারী।
* কিউয়িতে রয়েছে খাদ্যআঁশ যা হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে এবং কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
* শিশুদের শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা প্রতিরোধে কিউয়ি বেশ উপকারী।
* যাঁরা ওজন কমানোর জন্য খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন তাঁরা তাঁদের খাদ্য তালিকায় অনায়াসে রাখতে পারেন কিউয়ি। এতে পেট অনেকক্ষণ ভর্তি থাকে বলে খিদে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। একই কারণে ডায়াবেটিসের রোগীরাও কিউয়ি খেতে পারেন।
* কিউয়িতে বিদ্যমান প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদান মাংসপেশি গঠনে সহায়তা করে।
* নিয়মিত কিউয়ি খেলে ফ্লুসহ মৌসুমি অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধ করা সহজ হয়।
* ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য করে। কিউয়ির পেস্ট তৈরি করে টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগালে রোদের পোড়া দাগ দূর হয়।
* কিউয়ির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ই চুল পড়া রোধ করে এবং বার্ধক্য বিলম্বিত করে।
Nusrat Jahan Champ