ডাক্তার হয়েও কৃষি খামার গড়ে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন সফল নারী উদ্যোক্তা শারমিন হোসাইন। বাবা ডাক্তার গোলাম হোসেনের নিকট থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও টেলিভিশনে কৃষি ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বামীর ক্রয়কৃত ৭ বিঘা জমিতে কৃষি খামার করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন স্বনামধন্য চিকিৎসক শারমিন হোসাইন।
আট বছর আগে রাজধানীর অদূরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ২ নং গাজীপুর গ্রামে গড়ে হরিবোল শাকসবজি আবাদ দিয়ে ছোট পরি শুরু করেন এই কৃষি খাওয়ার। মাত্র ৭ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন বহুমুখী কৃষি খামারটি অল্প সময়ে অনুকরণীয় কৃষি খামারে পরিণত হয়েছে। ডাক্তার শারমিনের কৃষি স্বাস্থ্য সেবা ও অর্জিত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে গাজীপুর সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে কৃষি খামার। দেশের স্বনামধন্য ডাক্তার শারমিন বর্তমানে কৃষি নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। কৃষি সেক্টরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। চিকিৎসক সমাজে করেছে কৃষি বিপ্লবের সময়োপযোগী জাগরণ। তার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করছে। অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করছে নতুন নতুন এগ্রো বেইজড কৃষি খামার। যা দেশে কৃষি অগ্রগতি তথা 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বিনির্মাণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
ডাঃ শারমিন হোসাইন বলেন, আমার স্বামী আমিনুর রহমান খান দিপু গাজীপুরে ৭ বিঘা জমি ক্রয় করেন। পতিত সেই জমিতে কিছু করার পরিকল্পনা আসে মাথায়। বাবার কাছে শেখা সামান্য কৃষিকাজ এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব কৃষি গবেষক শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে মূলত পরীক্ষামূলকভাবে কৃষি খামারটি শুরু করি।
তিনি বলেন, কোন প্রকার ঋণ না নিয়ে শাকসবজি চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষি খামারের যাত্রা শুরু করি। পর্যায়ক্রমে রোপন করি বিভিন্ন প্রকার ফলফলাদি ও ঔষধি গাছ। একই সাথে হাঁস-মুরগী,গরু-ছাগল পালনসহ নানামুখী চাষাবাদ শুরু করি।
দিন দিন ঘরোয়া প্রকল্পটি প্রসার ঘটতে থাকে। লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয় আমার ছোট্ট প্রয়াস। বর্তমানে আমার খাবারে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও দেশীয় জৈব সারের সমন্বয়ে উৎপাদিত শাকসবজি ফলমূল এবং ডেইরী- পোল্টি, মৎস্য সহ আমার খামারে উৎপাদিত সকল পণ্য স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
প্রথম প্রথম অনেকেই নানা সমালোচনা করলেও বর্তমানে নানাভাবে উৎসাহিত করে আসছে আমার পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষী। আমার স্বামী প্রথমে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও বর্তমানে তিনি দারুন ভাবে উৎসাহিত করে চলেছে।
তিনি বলেন, ব্যস্ততম চিকিৎসা পেশা। তদুপরি সংসারে আমাদের একজন অটিজম সন্তান রয়েছে। তারপরেও সময় সুযোগ তৈরি করে নানা প্রতিকুলতা কাটিয়ে উঠে খামার সম্প্রসারণে ব্যস্ত রয়েছি। বর্তমানে আমার খামারের অভ্যন্তরের পুকুর মাছ চাষ করা হচ্ছে। ডেইরি ও পোল্ট্রি ফার্মের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির মুরগী, কবুতর, গরু, ছাগল পালন করা হচ্ছে । লালশাক, পুঁইশাক, বেগুন, গোল আলু, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, বাধাকপি, ওলকপি, গাজরসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যসম্মত শাকসবজি উৎপাদিত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রজাতির ১০৭৫টি ফল ও ঔষধি গাছএবং চল্লিশটি উন্নত জাতের পেয়ারা গাছ লাগানো হয়েছে। এগুলো ভবিষ্যতে খামারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তারা কৃষি স্বাস্থ্য সেবা নিতে প্রতিনিয়ত আমার নিকট আসছেন। আমি তাদের আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করছি।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বলেন, ডাঃ শারমিন হোসাইন অত্যন্ত পরিশ্রমী। তিনি ধৈর্য, অধ্যবসায়, সাহস ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে কৃষি খামার গড়ে তুলে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ও খামারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। দেশের সকল নারী ডাক্তারকে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
পরিশ্রম মানুষকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায় তার বাস্তব প্রমাণ হলো কৃষি খামারের স্বত্বাধিকারী কৃষাণি ডাঃ শারমিন হোসাইন। যা সে তার বাবা ডাক্তার গোলাম হোসেনের কাছ থেকে শিখেছেন। কঠোর পরিশ্রম করে ডাঃ শারমিন হোসাইন একজন মডেল খামারি হিসাবে ইতোমধ্যে অনেক পরিচিতি লাভ করেছেন। ডাঃ শারমিন হোসাইন এর সফলতা দেখে গাজীপুর ইউনিয়নের নারীরাও রীতিমতো প্রতিযোগিতামূলক কৃষি কাজে এগিয়ে এসেছেন। পরিশ্রম, ধৈর্য, অধ্যবসায়, সাহস ও মেধাকে কাজে লাগাতে পারলে একজন অটিজাম বা বিশেষ বাচ্চার মা হয়েও ডাঃ শারমিন হোসাইন এর মতো সকলেই এক সময় ক্রমান্বয়ে উপরে উঠতে থাকবে। এবং অটিজম বাচ্চার মা হয়েও কঠিন জীবন টাকে ফুলের মত কোমল করে ফেলতে পারবেন।