সাটুরিয়া দলিল লেখক সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি - অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সভাপতি আফজাল হোসেন ও তার সহযোগীরা বিএনপি জামাত চক্রের ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সাথে আতাত করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রেতা বিক্রেতাদের নিকট থেকে অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, সংশোধিত ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইনের আওতায় সরকার ভূমি রেজিস্ট্রেশন তথা ভূমি ব্যবস্থাপনায় আমুল পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু সাটুরিয়া চলছে উল্টো নিয়ম। নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা সমিতি পরিচালনার নিয়ম থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। চলছে মনগড়া কমিটিতে। রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সমিতির নামে একটি নির্ধারিত হারে চাঁদা আদায় করছে সভাপতি আবজাল হোসের । এতে সাধারণ দলিল লেখকরাও জিম্মি হয়ে পড়েছেন সমিতির নেতাদের কাছে।
জানাগেছে, সমিতির নির্বাচন দিয়ে কমিটি করার নিয়ম থাকলে ও মনগড়া ভাবে কমিটি বানিয়ে বর্তমান কমিটির নেতারা সমিতির দায়িত্বে রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। সভাপতির একনিষ্ঠ কিছু বিএনপির উপজেলা ও ইউনিয়নের পদধারী নেতা নিয়ে বলয় সৃষ্টি করে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে সমিতি চালাচ্ছে। সমিতির ক্যাশিয়ার আবুল কালাম আজীবন একই পদে বহাল রয়েছে। আগে পরের সব কমিটির তিনিই ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। মেয়াদহীন কমিটির সভাপতি রেজিস্ট্রি অফিসে আধিপত্য দখল করে সাধারণ দলিল লেখকদের জিম্মি করে সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। দলিল লেখক ও তাদের পরিবারের সুবিধার জন্য সমিতির কার্যকম করার কথা থাকলে সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ দলিল লেখকরা। উল্লেখ্য দলিল লেখক সমিতির সিনিয়র নেতা প্রয়াত দলিল লেখক রফিকুল ইসলাম মৃত্যু বরণ করলে তার জানাযার নামাজে দলিল লেখক সমিতির সভাপতির পক্ষ থেকে কেউ অংশগ্রহণ করেনি। বিভিন্ন সময়ে সমিতির সদস্যরা কোন বিপদে পড়লে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করার কারনে দিনদিন অপরাধ প্রবনতা বেড়ে চলেছে।
দলিল লেখকদের রেজিস্ট্রি অফিসের ভিতরে বসার জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ হাজার করে টাকা চাঁদা নিয়ে এখন পর্যন্ত বসার ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি এবং ওই টাকার কোন হিসাব সাধারণ দলিল লেখকদের দেয়া হচ্ছে না। সাবরেজিস্টার অফিসে ভিতরে জনগনের ও দলিল লেখকদের বসার ব্যবস্হা না হওয়ায় দলিল দাতা গ্রহীতাদের পোহাতে হচ্ছে নানান দূর্ভোগ।
সেরেস্তাে নামে অতিরিক্ত হারে ২হাজার ৭শ করে টাকা নেয়া হচ্ছে দলিল লেখকদের কাছ থেকে। এমনকি দলিলের নকল তুলতে নেয়া হচ্ছে ১ হাজার ৭শ টাকা করে। অথচ সমিতির নেই কোন কার্যক্রম। সমিতির সুবিধা থেকে বঞ্চিত সাধারণ দলিল লেখককেরা। তারা সমিতির বাইরে গিয়ে কোনো ভূমি রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। রেজিস্ট্রি অফিসকে জিম্মি করে সরকারি নির্ধারিত ফিসের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে সমিতি। সাধারণ ও নিরীহ মানুষ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। জমির ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জিম্মি করে আদায়কৃত টাকা ভাগ করে নিচ্ছেন সমিতির নামধারী কতিপয় নেতারা।
সরেজমিন গিয়ে সাটুরিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সমিতির কাছে জমির দাতা ও গ্রহীতাদের জিম্মিদশার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। সমিতির বিনা অনুমতিতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কোনো জমি রেজিস্ট্রি হয় না বলে ব্যাপক অভিযোগ আছে। সাধারণ দলিল লেখকদেরও সমিতির বিনা অনুমতিতে দলিল করার নেই ক্ষমতা। দলিল লেখার যাবতীয় টাকা দিতে হয় সমিতিকে। তারপর সমিতির গোপনীয় একটি সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করার পরই দলিল যায় সাব-রেজিস্ট্রারের টেবিলে। সেখানেও প্রতি টেবিলে দলিল প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা এবং ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন ও কাগজের ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট করণিক সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে প্রকারভেদে আদায় করেন লাখ টাকা পর্যন্ত। এমনটাই বলছেন ভুক্তভোগী ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক।
আরও জানা যায়, এ অফিসে সনদপ্রাপ্ত দলিল লেখক রয়েছেন ৫০ জন । আইন অনুযায়ী দলিল লেখকরা দলিল লেখার বিনিময়ে প্রতি পৃষ্ঠা বাবদ ও সরকারি ফি’র হার নির্ধারণ করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে একটি করে তালিকা টানিয়ে রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া লাইসেন্সধারী কোনো দলিল লেখক আইন লঙ্ঘন করলে সাব-রেজিস্ট্রার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কিন্তু সাটুরিয়া এসব নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সাব-রেজিস্ট্রারও সমিতির অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে অনেকটা তাল মিলিয়ে চলছেন।
সিনিয়র দলিল লেখক সিরাজুল ইসলাম বলেন, নামে শুধু সমিতি আছে? কামে নাই। আমি এসব বাদ দিয়ে দিয়েছি। দলিল লেখকদের ভিতরে বসার জন্য ৫ হাজার টাকা করে সব দলিল লেখক দিয়েছিল ১ বছর আগে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওই টাকার হিসেব চাইলে তিনি বিভিন্ন তালবাহানা করে বলে ওই টাকা দিয়ে খুটি বানানো হয়েছে। এবং ঢাকা যাতায়াতে ও জেলা রেজিস্ট্রারকে দেয়া হয়েছে। আর সেরেস্তা একেক অফিস একেক ভাবে নেয়। আমাদের ছোট অফিস খরচ বেশি তাই বেশি নেয় সমিতি। নকল তুলতে আগে কম নেয়া হতো, এখন ১৭শ করে নেয়া হয়।
দলিল লেখক ছাত্তার বলেন, রেজিস্ট্র অফিসের ভিতরে বসার জন্য আমিও ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। একটু ঝামেলার কারণে বিষয়টি আটকে আছে। বিভিন্ন খরচাপাতির জন্য আমাদের এঅফিসে একটু বেশি সেরেস্তা নেয়া হচ্ছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক দলিল লেখক জানান, ৫০ জন দলিল লেখকদের কাছ থেকে ৫ হাজার করে টাকা নিয়েছে সমিতির নেতারা। সেই টাকা তারা নিজেদের পকেস্থ করেছে। সমিতির কোন হিসাব নিকাশ নেই। দুই একজন মিলে হরিলুট করে খাচ্ছে। সাধারণ দলিল লেখকদের জিম্মি করে ২৭ শ টাকা করে সেরেস্তা আদায় করা হচ্ছে। যা বাংলাদেশের কোন অফিসে নেই। নকল তুলতে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। সবমিলিয়ে আমরা সাধারণ দলিল লেখকরা সমিতি নামের এই চাঁদাবাজ সংগঠনের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছি।
এবিষয়ে সাটুরিয়া দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আঃ আজিজের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে সাটুরিয়া দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আফজাল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাকে অতিরিক্ত সেরেস্তা নামের টাকা নেয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি অফিসে আসেন, ফোনে কথা বলা যায় না। দলিল লেখকদের রেজিস্ট্র অফিসের ভিতরে বসার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।