সড়ক ও জনপথ অধদিপ্তররে প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর বলছেনে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ দেখার প্রতীক্ষায় আছি। সেই লক্ষ্যেই দেশের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। সারাদেশের সড়ক ও জনপথের অবস্থা যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ঢাকা-মাওয়া ৫৫ কিলোমিটার, জয়দেবপুর-এলেঙ্গা, রংপুর মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাজ চলমান আছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ৬ লেনের সমীক্ষা কাজ চলছে। ইতিমধ্যে পায়রা সেতুন উদ্বোধন করা হয়েছে। ঢাকা-কুয়াকাটা পদ্মাসেতু উদ্বোধন হলে ৫ ঘন্টায় যাওয়া যাবে সেখানে।
দৈনিক জাগো কণ্ঠকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধান প্রকৌশলী আরও বলেন, সড়কের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা রুট চার লেনে উন্নয়নের কাজ চলছে এবং হাইওয়ে ও এসএমভিটিও (শ্লো মুভি ভিকেল ট্রাফিক) থাকবে। ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা রুটে ফোরলেনের কাজ চলছে এবং এসএমভিটিও থাকবে। সেখানে ভুমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। ভুমি অধিগ্রহণের জন্য অনেক জায়গায় টাকা পরিশোধও করা হয়েছে। পিডি হিসেবে আছেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, বরিশাল।
১৯৮৬ সালের ৩ জুলাইন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে সহকারি প্রকৌশলী হিসাবে যোগদান করেন আবদুস সবুর। দীর্ঘদিন বিভিন্ন কর্মস্থলে দূরদর্শিতা, নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে যোগদান করেন তিনি। এরপর দেশের সড়ক বিভাগের নানা উন্নয়ণ পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন এই প্রকৌশলী।
এ বিষয়ে আবদুস সবুর জানান, ঢাকা বাইপাস-মদনপুর, কাঞ্চন, ভোগড়া সড়কের কাজ চলছে পিপির আওতায়। বাংলাদেশ সরকার এবং চায়নার যৌথ উদ্যোগে এটির কাজ চলছে। রামপুরা-আমুলিয়া-ডেমরা রুটে এক্সপ্রেসওয়ের কাজও চলছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এই কাজ করছে।
তিনি বলেন, সারাদেশের সড়ক ও জনপথের অবস্থা যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল। প্রতিবছর এটার উন্নয়নে ২০ হাজার এবং সংস্কারের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়। এবছরও ২৪ হাজর কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে।
প্রধান প্রকৌশলী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ড্রাইভারদের বিশ্রামের জন্য চারটি বিভাগীয় মহাসড়কে চারটি বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলো হলো- ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে কুমিল্লার নিমশাস, ঢাকা-রাজশাহী রুটের সিরাজগঞ্জ, ঢাকা-সিলেট সড়কের হবিগঞ্জের মাধবপুর এবং ঢাকা-যশোর-খুলনা রুটের জন্য মাগুরায় এসব বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সড়কে ওভারলোডিং বন্ধ করার জন্য ২১ টি স্থানে ২৮টি ওজন স্কেল বসানো হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের সড়কগুলো নষ্ট হওয়ার মুল কারণ হলো-ওভারহেডেড যানবাহন। অর্থাৎ বাংলাদেশের সড়কগুলো ডিজাইন করা হয়েছে ১৫ টন মালামাল বহনকারী যানবাহনের জন্য। কিন্তু সেখানে ২৩ থেকে ২৪ টন ওজনের মালামাল বহন করা হয়। যেগুলো বন্ধ করা দরকার।
তিনি বলেন, সড়কও জনপথের টেন্ডারগুলো সিপিটিইউ মেনেই সম্পন্ন করা হয়। শতভাগ স্বচ্ছভাবে টেন্ডারকাজ সম্পন্ন করে সড়ক ও জনপথ। ঠিকাদারের কার্যক্রম সঠিকভাবে তদারকির জন্য জিরোটলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেন, সড়ক ও জনপথের নিজস্ব ল্যাবরেটরি আছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারাও যথেষ্ট আন্তরিক। আমি নিজেও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করেছি। সারাদেশে এরইমধ্যে ৪০ থেকে ৫০টি এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শনে গেছি। সেখানকার উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিদর্শন করা হয়েছে। যেখানে যেখানে কোন ভুল-ত্রুটি দেখেছি, সাথে সাথেই তা সমাধানের নির্দেশ দিয়েছি।
তিনি বলেন, সারাদেশে গণমাধ্যম থেকে যেসব খবর পাই সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখি এবং তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেই। স্ব স্ব ইউনিটকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের একটি ফ্লাইওভারের বিষয়ে স্থানীয় আজাদ পত্রিকায় খবর ছাপা হলে-সে বিষয়ে তাৎক্ষনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন সড়ক ও জনপথের প্রধান প্রকৌশলী।
তিনি বলেন, সড়কের উন্নয়নের বিষয়ে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী কনসার্ন। তিনি সব কিছুর খোঁজখবর রাখেন। তার নির্দেশেই সড়ক ও জনপথের উন্নয়ণ কাজ উত্তরোত্তর এগিয়ে যাচ্ছে।
২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকৈ ২০২১ সাল পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রকৌশলী আব্দুস সবুর বলেন, চার লেন ও তদুর্ধ্ব লেনের মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে ৩৯৮কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৫৫ কিলোমিটার। উভয়পাশে সার্ভিস লেনসহ জাতীয় মহাসড়ক ও ৪ লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান রয়েছে ১৭৬ কিলোমিটার। এছাড়া ৪ লেনে উন্নীতকরণের লক্ষে মহাসড়কের সম্ভাব্যতা যাচাই ও ডিটেইল্ড ডিজাইন করা হচ্ছে এক হাজার ৭১১ কিলোমিটার।
অধিদপ্তরের কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়ক সমূহ সহ গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ ও কালভার্ট উন্নয়ন ও রক্ষনাবেক্ষন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় ২২,৪১৮.৯৫ কিঃমিঃ সড়ক, ৩,৫৪৮ টি ব্রিজ, ৮৫৬ টি বেইলী ব্রিজ , ১৪,৮১৪ টি কালভার্ট রয়েছে।
মো. আবদুস সবুরের জন্ম ভোলা জেলায়। তাঁর পিতার নাম মরহুম আলহাজ মো. আবদুস সাকুর এবং মাতার নাম মরহুমা মমতাজ বেগম। তিনি ভোলা সরকারি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ভোলা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন এবং ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি. ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে ট্রান্সপোর্টেশান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা অর্জন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে আবদুস সবুর এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। মেয়ে দেশের বাইরে থাকেন এবং ছেলে ইউএস বাংলার পাইলট হিসেবে কর্মরত।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে কর্মরত অবস্থায় সরকারি কাজের অংশ হিসাবে তিনি সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, চীন ও ভারতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।