করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোবাইল ও গ্যাজেট আসক্তি বাড়ছে- এ বিষয়টি এরই মধ্যে স্পষ্ট। তবে এর পরিসংখ্যানগত দিকটি ছিল অনুমাননির্ভর। তবে সন্তুষ্টির বিষয় হলো, সম্প্রতি এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে, যার ভিত্তিতে আমরা মাত্রাগত পরিমাণ নিয়ে ধারণা পেতে পারি। গবেষণায় জানা যায়, করোনাকালে গত এক বছরে দেশে স্কুল শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনসহ গ্যাজেট আসক্তি বেড়েছে। এ কারণে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে মাথাব্যথা, হাত-পা ব্যথা, ঘুমের সমস্যা। প্রভাব পড়েছে দৃষ্টিশক্তির ওপরও। ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিকভাবে বিষণœ এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া কিংবা অল্পতেই রেগে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে। আরও বলা হয়, ৬৭ ভাগ শিক্ষার্থী দিনে ২-৪ ঘণ্টা মোবাইলে সময় কাটাচ্ছে, ৯ ভাগ কম্পিউটার স্ক্রিনে ও আট ভাগ ট্যাবে দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করে। ২০১৮-১৯ সালে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক সমস্যাগুলোর মধ্যে ডায়রিয়া, চুলকানি, পেটব্যথা, জ্বর-সর্দির সমস্যা ছিল বেশি। কিন্তু গত দেড় বছরে মাথাব্যথা, দৃষ্টিশক্তি জটিলতা, ঘুমের সমস্যা, বিষণ্নতা ও খিটখিটে মেজাজ এবং জ্বর সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে ভাবনার।
বর্তমান পেক্ষাপটে এই গবেষণাকর্মটি খুবই গুরুত্ববহ। দেশের ২১টি জেলায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ১ হাজার ৮০৩ শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত হলেও এর একটি সার্বিক রূপ রয়েছে বলে আমরা ধারণা করতে পারি। গবেষণার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ, এসব শারীরিক সমস্যার পেছনে ঘরবন্দি থাকা এবং গ্যাজেটের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তির উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক পাওয়া গেছে। ২০২০ সালে দেশের ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীই শারীরিক কোনো কাজ বা খেলাধুলা করার অবকাশ পায়নি। তাদের ৫০ ভাগ ঘরের বাইরে কোনো শারীরিক কর্মকা-ের সুযোগ একেবারেই পায়নি। মাত্র ২৫ ভাগ শিক্ষার্থী গ্যাজেট ব্যবহার করেছে নিয়মিত অনলাইন ক্লাসের জন্য। ৪০ ভাগ কার্টুন, নাটক ও সিনেমা দেখার কাজে, ২৭ ভাগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের জন্য এবং ১৭ ভাগ শিক্ষার্থী গেমস খেলতে মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটার ব্যবহার করেছে। সবচেয়ে বেশি মোবাইল ব্যবহার করতে দেখা গেছে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের এবং সবচেয়ে কম দেখা গেছে মাদ্রাসা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউএসটিসি ও সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এ গবেষণায় অংশ নেন। সময়োপযোগী এই গবেষণার জন্য তাদের ধন্যবাদ।
বিশেষজ্ঞের মতে, অতি অল্প বয়সে গ্যাজেট নির্ভরশীলতা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এসব সমস্যা যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, তবে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একটি বড় অংশের জন্যই তা আশঙ্কার বিষয়। সংগত কারণেই এই অবস্থার অবসান হওয়া জরুরি। সমস্যাগুলো দীর্ঘায়িত হোক, এটা কারও কাম্য নয়। তবে এটাও বাস্তবতা, আইনি ব্যবস্থা কিংবা জবরদস্তির মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব নয়। শিশু কিংবা শিক্ষার্থীদের মোবাইল ও গ্যাজেট আসক্তি কমানোর জন্য পারিবারিকভাবে বিভিন্ন উদ্যোগের প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এই নিয়ে সবারই যতœবান হতে হবে। (সূত্র: আলোকিত বাংলাদেশ)