নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৭ নং ওয়ার্ড কদমতলী ভান্ডারীপুল হয়ে নয়াপাড়া এলাকায় শফিউল আলম নামে এক মুরুব্বি বসবাস করতেন। তিনি সচিবালয়ে চাকরি করতেন। ৭ বছর আগে রিটায়ার্ড করেছেন তিনি। বিয়ে করেননি, আত্মীয় স্বজনও কাছে থাকতো না। পুরা বাড়িতে তিনি একা থাকতেন। ৪ দিন আগে ভদ্রলোক মৃত্যু বরন করেন।
এলাকাবাসী তার কোন খোজ খবর না পেয়ে সবাই মিলে তার বাড়ির সামনে যায়। তারপর বর্ষা মামা, সবুজ ভাই, মিন্টু ভাই বাড়ির প্রথম গেইটের তালা ভেঙ্গে তার বেড রুমের সামনে যায় তারপর সবাই দূর্গন্ধ পায়। পরে বেড রুমের দরজা ভেঙ্গে দেখে ভদ্রলোক মৃত্যু বরন করে লাশ ফুলে দুর্গন্ধে একাকার। তারপর এলাকা থেকে আমাকে ফোন দেয় আমি সাথে সাথে দৌড়ে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি লাশের অবস্হা দেখে ঐ এলাকার মুরুব্বি রাজ্জাক কাকা ছাড়া আর কেউ এই লাশ গোসল করাইতে এগিয়ে আসছেন না। যখন শুনলাম ভদ্রলোক বিয়ে করেননি তার কোন সন্তান নেই তখন নিজেকে সন্তানের ভূমিকায় নিয়ে লাশ গোসলের ব্যবস্হা করি। ফোন দেই আমার স্নেহের ছোট ভাই যুবদল নেতা মোফাজ্জল আনোয়ারকে। আনোয়ার খবর পেয়ে লোকজন নিয়ে ঠিকানা মত পৌঁছে সাথে সাথে রাজ্জাক কাকাকে নিয়ে লাশ গোসলের ব্যবস্হা করে। পারফিউম দিয়ে অনেক কষ্টে লাশ গোসল করায়। ধরতে গেলেই মাংস ক্ষয়ে পড়ে। টিস্যু দিয়ে কোন রকম মুছে তারপর কাফন পরিধান করায়।

আমি এলাকার মা বোনদের নিয়ে কালিমা শরীফ খতম দিতে থাকি। এর মধ্যে বেচারার স্ত্রী সন্তান না থাকায় আত্মীয় স্বজন এসে তার সম্পদ কে কে পাবে এই নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেয়। বাড়িটার দিকে আর লাশটির দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি চলে আসে। মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে কারো কোন টেনশন নেই, সবার টেনশন সম্পত্তি নিয়ে। ভাবতে লাগলাম পৃথিবীর মানুষগুলি এত কঠিন কেনো। আমি সহ এলাকার সবাই স্তব্ধ। ভদ্রলোকের বাড়ী চাঁদপুর। এলাকার সবাই জানাজা শেষে ভদ্রলোককে এম্বুলেন্সে তুলে দেই। চলে গেলো মানুষটি পড়ে রইলো তার সারাজীবনের পরিশ্রমে তিল তিল করে গড়া সখের বাড়ীটি।

(৮ জানুয়ারি,২০২২, ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া।)
- লেখক: সাবেক কাউন্সিলর, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন।