প্রিয়া ইসলাম ফাতিহা, ভারতের একজন তরুণী শিল্পপতি, দানবীর। জীবন সংগ্রামের জন্য তিনি ভারতের কোটি কোটি তরুণের প্রেরণা!
প্রিয়া ইসলাম ফাতিহা, নামটির সাথে সকলেই কমবেশি পরিচিত। এক অদম্য নারী, এক সাহসী নারী, এক প্রতিবাদী কন্ঠ।
➡️তিনি পাঁচটি আশ্রম পরিচালনা করেন। তার মাঝে তিনটে বৃদ্ধাশ্রম এবং দুটি শিশু আশ্রম।
➡️বিভিন্ন জায়গায় তার প্রতিষ্ঠিত দশটি স্কুল আছে। যেখানে সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে পড়াশোনা করে।
➡️শিলিগুড়িতে তার বাবার নামে একটি হাসপাতাল আছে, যেখানে বিনা মূল্যে গরিব ও দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
➡️মসজিদ থেকে মন্দির সব উন্নয়ন মূলক কাজে তার অগ্রসর সবার আগে।
➡️আম্ফানে রাজ্যের মন্ত্রণালয়ে ১০০ কোটি রুপি অর্থ অনুদান করেছিলেন।
শত শত দরিদ্র অসহায় মানুষের মাথার ছাদ প্রিয়া ইসলাম। হাজারো তরুণ-তরুনীর কর্মসংস্থা তৈরী করে দিয়েছেন। বিভিন্ন গনমাধ্যাম তার সাক্ষাতকার নিতে চাইলেও তিনি গনমাধ্যমে আসতে রাজী হননি। নিজের মতো করে অসহায় মানুষদের মাঝে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেন।তিনি চান না যে তার অনুদানের বিষয়টা ঢালাওভাবে প্রচার হোক।তিনি স্মরণ করেন যে, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর বাণী- দান করো ধর্ম দেখো না, দান করো এমনভাবে যেন ডান হাত দান করলে বাম হাত টের না পায়। এটাই ইসলাম।
এই প্রসঙ্গে একটি কথা মনে পড়ে গেল, কিছু ব্রাহ্মণ্যবাদী লোকের লেখায় পাওয়া যায় যে দান করো আর সেলফি তুলে পোস্ট করো। একটি রুটি দশজনে মিলে দান করে আর সেলফি তুলে পোস্ট করে- এমন নজিরও রয়েছে।
যাইহোক, শৈশবে প্রিয়া ইসলামের বাবা 'লিউকোমিয়া' ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবাকে চিকিৎসা করানোর মতো অর্থ তার ছিলোনা। বাবা ছিলো তাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাই বাবার মৃত্যুর পর তাদের জীবনে নেমে আসে দারিদ্র নামের ঝড়। তার মামারা বেশ ধনাঢ্য ছিলো কিন্তু আত্মসম্মানের ভয়ে তার মা কোনো সাহায্য নেননি। একটি সেলাই মেশিন দিয়ে তার মা উপার্জন করতেন। কিন্তু এক বেলা খেলে অন্য বেলে খেতে পারতো না।
তাদের সংসার বলতে মা ছোট ভাই এবং তিনি ছিলেন। সংসারের দুরাবস্থা দেখে পাঁচ বছর বয়সে প্রিয়া ইসলাম একটি ছোটখাটো রেস্তরাঁয় প্লেট পরিষ্কারের কাজ শুরু করেন। মাসে ৪৫০টাকা মাইনে পেতেন।পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে গেলেন।
মাধ্যমিক পাশ করে বাড়ি গিয়ে-গিয়ে টিউশনি শুরু করেন। একদিন একটি এনজিওতে জব পেয়ে যান। হঠাৎ কোনো এক ছাত্রের বাড়ি পড়াতে গিয়ে এক শাড়ির কারখানার সন্ধান পান। কর্তার কাছ থেকে শাড়ি পাইকারি দরে কিনে কালিঘাট সহ বিভিন্ন কাপড়ের দোকানে ৩০ টাকা লাভে শাড়ি সরবরাহ করতে শুরু করেন। প্রথম দিন ১০০ পিছ শাড়ি ৩০ টাকা লাভে সেল করে ৩ হাজার টাকা উপার্জন করেন। সেই থেকেই শুরু হয় ব্যবসা জীবনের পথ চলা। চলতে থাকেন আর পাশাপাশি কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসার উপর তিনি ডি.বি.এ. ডক্টরেট করেন।
সময়ের সাথে সাথে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে আজ কলকাতার দশজন টপ ব্যবসায়ীদের মধ্যে তিনি তৃতীয়। দেশ বিদেশে বিস্তার করে আছে তার ব্যবসা। তিনি 'ফোমান গ্রুপ অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড' কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা। আর তার ছোট ভাই অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটির হিস্ট্রি লেকচারার।
প্রিয়া ইসলামের সম্পত্তির পরিমাণ এতো যে, প্রতি বছর ১৮০ কোটি রুপি সরকারি ট্যাক্স দিতে হয়। প্রতি বছর ১ হাজার কোটি ইন্ডিয়ান রুপি উপার্জন করেন। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক তিনি। তিনি দলীয় ও বিরোধীদলীয় সবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর জাগ্রত রাখেন। দেশ থেকে বিদেশি মিনিস্ট্রি অব্দি তার প্রভাব।
স্যালুট তাকে।তিনিই আমাদের সকলের প্রেরণা।
- ঝুমুর রায়ের লেখা থেকে