নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদী বেলাব উপজেলার মর্তুজা খাতুনের ঘর নির্মাণের জন্য সঞ্চয়ের ৭০ হাজার কেটে টুকরো টুকরো করে দিল রাক্ষুসে ইঁদুর। পরে অসহায় এই নারীকে একটি চার চালা বিশিষ্ট সেমি পাকা ঘর, একটি বাথ রুম, একটি টিউবওয়েল ও একটি রান্না ঘরে নির্মাণ করে দেয় সামাজিক সংগঠন ‘সাইলেন্ট হ্যান্ডস সাপোর্ট সোসাইটি’।
আজ রোববার (৭ নভেম্বর) বিকেলে সংগঠনের দায়িত্বশীল সদস্যরা মর্তুজা খাতুনকে ঘর বুঝিয়ে দেন।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, অসহায় মর্তুজা খাতুনের বাড়ি নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম মুগায়। তার পিতার নাম- মৃত মানিক চান এবং মাতা আবেদা খাতুন। প্রায় পনের বছর আগে বিয়ে হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলার ইছামতী গ্রামের নুরে আলমের সঙ্গে। তাদের ঘরে একটি কন্যা সন্তানও আছে। কিন্তু সংসার বেশি দিন টিকেনি। এক পর্যায় বিয়ে ভেঙ্গে বাবার বাড়ি চলে আসেন মর্তুজা খাতুন। সেখানে এসে ৮০ উর্ধ্বো মা আবেদা বেগমকে নিয়ে সংসারের ঘানি মাথায় নিয়ে চলতে থাকেন। কিন্তু থাকার ঘর না থাকায় একচালা ছাপড়ায় দিন কাটে তাদের। একটু বৃষ্টিতেই ভিজে যেত ঘরের সব জিনিসপত্র।

মর্তুজা খাতুন জানান, তার পিতা মৃত্যুর সময় ২ শতাংশ জমি রেখে যান। এরই মাঝে সে অন্যের বাড়িতে কাজ করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগার ও একটি ঘর নির্মাণের টাকা সঞ্চয় করতে থাকে। সেই টাকা কারও কাছে না দিয়ে একটি মাটির গর্তে লুকিয়ে রাখে। ঘর নির্মাণের জন্য তিলে তিলে জমানো ৭০ হাজার টাকা যখন মাটির নিচ থেকে উত্তোলন করতে যায় তখন দেখতে পায় সব টাকাই রাক্ষুসে ইঁদুর কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে। এই দেখে মর্তুজা খাতুন কান্নাকাটি ও আহাজারি শুরু করেন। তার আহাজারিতে আশেপারের লোকজন জড়ো হয়ে সমবেদনা প্রকাশ করতে থাকেন। সেখানে সাইলেন্ট হ্যান্ডস সাপোর্ট সোসাইটির স্থানীয় প্রতিনিধি মঞ্জু আহম্মেদও উপস্থিত ছিলেন।
তিনি তার সংগঠনের উর্ধ্বোতনকে এ ঘটনা জানালে তারা ওই নারীর সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। উদ্যোগ নেন ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার। দীর্ঘ দিন কাজ শেষে রোববার তাকে চার চালা বিশিষ্ট সেমি পাকা ঘর, একটি বাথ রুম, একটি টিউবওয়েল ও একটি রান্না ঘরে বুঝিয়ে দেন।

নতুন ঘর পেয়ে মর্তুজা খাতুন জানান, ‘আমার সঞ্চিত টাকা নষ্ট হওয়ার পর আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। কি করবো আমি উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এমন সময় আমার পাশের বাড়ির মঞ্জু এসে আমাকে সহযোগিতার কথা বলে এবং তার সহযোগিতায় আজ আমি এ ঘর পেয়েছি। আমি দোয়া করি তাদের যেন আল্লাহ মঙ্গল করেন। ’
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইফরানুল হক ভুইয়া জামান বলেন, এ উদ্যোগটি খুবই মহৎ এবং প্রশংসার যোগ্য। আমি দোয়া করি তারা যেন সামনের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে পরে।
সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাহিদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে দেশের অসহায় দরিদ্র ব্যক্তিদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করা। যার ধারা বাহিকতায় আজকের এ ঘর নির্মাণ।’ এসময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক শফিুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলামসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।