বাঁচার প্রয়োজনে নানামুখী পেশায় ব্যস্ত মানুষ। বিচিত্র সব পেশার মানুষগুলো কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছে তাদের জীবন। এমনি একজন মানুষ শামছুর রহমান। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস ইমিগ্রেশনের সামনে গাছের তলায় ঝাল মুড়ি বিক্রি করে।
চারিদিকে মানুষের হইচৈ। প্রতিদিন বেনাপোল চেকপোস্টে নামে মানুষের ঢল। এই জায়গাটি পর্যটন এলাকা না হলেও প্রতিদিন স্থানীয় ও দেশী বিদেশী মানুষের যাতায়াত চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। কারন এটি একটি আন্তর্জাতিক চেকপোষ্ট ও দেশের বৃহৎ স্থল বন্দর।
জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন কাঁধে করে মুড়ির টিন নিয়ে হাজির হয় যশোরের ঝিকরগাছা থানার সত্তোর্ধ ঝাল মুড়ি বিক্রেতা শামছুর রহমান। বাসের ভাড়া বেশি তাই ট্রেনে যাতায়াত করে। ট্রেনের মধ্যে যাওয়া আসার মধ্যে কিছু বেচাবিক্রিও হয়। তিনি প্রতিদিন কাঁচা ছোলা, সিদ্ধ ছোলা, ডিম ও ঝাল মুড়ি বিক্রি করে থাকেন এসব মানুষের কাছে। প্রায় ৫০ বছর যাবত এ জনপদে শামছুর রহমান ছোলা মুড়ি বিক্রি করে স্বাবলম্বী।
বেনাপোল চেকপোষ্টের শুণ্য রেখার কাছাকাছি ১৮০ বছরের শিশু গাছ। সেখানে পাসপোর্টযাত্রীসহ দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে আসা মানুষ ভীড় জমায়। আর সেই গাছ তলায় শামছুর রহমানের স্বাদের মুখরোচক চানাচুর, ছোলা, মুড়ি, ডিম খায় এসব মানুষ। যার যা ভালো লাগে সেটাই খায় তার এই ছোট টিনের বাক্স থেকে। কোন চেয়ার বা দোকান ছাড়া একটি ইটের উপর বসে বিক্রি করে তিনি তার মুখরোচক এ খাদ্য সামগ্রী।
শামছুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা যায় তিনি একজন আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ। জীবনযুদ্ধে হার না মানা একজন আত্মপ্রত্যায়ী। তার মনের মাধুরী দিয়ে চানাচুর, মুড়ি, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, ছোলাসহ বিভিন্ন রকম মসলা দিয়ে অত্যান্ত মুখরোচক ভাবে মুড়ি মাখিয়ে গ্রাহকদের মন আকৃষ্ট করে চলেছে। ঝালমুড়ি বিক্রি করেই আজ তিনি স্বাবলম্বী।
বর্তমানে তিনি যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানায় সুখের সংসারে আছেন। তার ৫টি ছেলে মেয়ে। এর মধ্যে দুইটি ছেলে ও তিনটি মেয়ে। তবে তার একটি ছেলে প্রতিবন্ধী। ছেলে মেয়েদের সামান্য লেখা পড়া শিখিয়েছেন। মেয়েদের ভাল পাত্রর সাথে বিয়ে দিয়েছেন।
শামছুর রহমান বলেন, ১৯৭৪ সাল থেকে এই বেনাপোলে আমি এসব মুখরোচক খাবার বিক্রি করি। সে সময় তাকে সকলে ভাই বললেও এখন সকলে তাকে বয়সের ভারে চাচা বলে।
প্রতিদিন বেনাপোল চেকপোষ্টের শিশু গাছটির নীচে দেখা যায় মানুষটির মুখে যেন সার্বক্ষনিক আনন্দের ছাপ। সকলের সাথে সে হেসে কথা বলে। প্রতিদিন আয় কত জানতে চাইলে বলেন প্রতিদিন তার আয় ৪ থেকে ৫ শত টাকা। এ বেচকেনার উপরই তার সংসার। তাতে তার ভাল ভাবে সংসার চলে। তবে শামছুর রহমান জানালেন, এখন সব কিছুরই বাড়তি দাম। মানুষকে সেভাবে আর বেশি বেশি মুড়ি দিতে পারি না।
বেনাপোল চেকপোষ্টের জি এম আশরাফ বলেন, শামছুর রহমান একজন রসিক মানুষ। তাকে আমি ছোট বেলা থেকে দেখছি তিনি এ চেকপোষ্ট এলাকায় ছোলামুড়ি বিক্রি করে আসছেন। মাঝে মাঝে তিনি ক্লান্তি দুর করার জন্য গান গেয়ে থাকেন।
চেকপোষ্ট প্রাইভেট কার চালক মনিরুজ্জামান বলেন, শামছু চাচাকে আমরা ছোট বেলা থেকে দেখছি এসব ঝাল চানাচুর নিয়ে ছুটাছুটি করতে। আমরাসহ এখানে ট্রাক চালক ও ভারত বাংলাদেশের অনেক মানুষ তার ঝাল চানাচুর খেয়ে প্রশংসা করেন।