সরকারের হটানোর আন্দোলনে ‘ইস্পাতকঠিত গণঐক্য’ সৃষ্টি করতে বিএনপিকেই দায়িত্ব নিতে হবে উল্লেখ করে এজন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আজ সোমবার বিকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এই আহ্বান জানান তিনি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, যেখানেই গণতন্ত্র সেখানেই বিএনপির অবদান। আর যেখানে আওয়ামী লীগ সেখানেই গণতন্ত্রকে হত্যা। তাই আজকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দকে দায়িত্ব নিতে হবে এদেশের সকল জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে ইস্পাতকঠিন গণঐক্য সৃষ্টি করে আগামী দিনে সরকার বিদায়ের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা এই পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সকল প্রকার আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। আগামীদিনেও সরকার বিদায় হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিকভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে এই সরকারকে বিদায় করবো- এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে যুগপত আন্দোলনের ১০ দফা দাবিতে আগামী ২৫ জানুয়ারি সারাদেশে সকল মহানগর ও জেলা সদরে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ১০ দফা দাবিসহ বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর একটি মিছিল কাকরাইলের নাইটেঙ্গল মোড় ঘুরে ফকিরেরপুল মোড় প্রদক্ষিন করে আবার নয়া পল্টনে এসে হয়।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, কয়েকদিন আগে সরকার কোনো নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে, বিদ্যুতের যে একটি কমিশন আছে তাদের কোনো মতামত না নিয়ে, গণশুনানী না করে সরকার প্রশাসনিক হুকুমের মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে এবং বলেছে যে, মাসে মাসে নাকী এই বিদ্যুতের দাম তারা্ সমন্বয় করবে। অর্থাত এই ৫ শতাংশ নয়, আরো ভবিষ্যতে বিদ্যুতে দাম তারা বৃদ্ধি করবে।
আজকে সারাদেশের মানুষ এই বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করতে গিয়ে তারা দুর্ভোগে পড়েছে। আপনারা জানেন ২০০৬ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যখন সরকার ছিলো বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি যে সর্বোচ্চ দর ছিলো ২ টাকা ৬০ পয়সা এখন তা ১১ টাকার উপরে। কেনো এই দাম করেছে? এই সরকার ক্ষমতায় এসে যেসকল বিদ্যুৎ ইউনিট মাত্র স্বল্পকালীন সময়ের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে ভাড়া করে আনা হয় সেসব রেন্টাল বিদ্যুৎ পাওয়ার তারা এদেশে স্থাপন করেছে এবং এই রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের মাধ্যমে যাতে তারা লুটপাট করতে পারে সেজন্য পার্লামেন্ট থেকে ইনডেমনিটি পাস করেছে। ১৪ বছর ধরে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে লুট করেছে। এখনও যে দাম বৃদ্ধি এটাও লুটপাট এবং অর্থ পাচার করার জন্য করা হয়েছে।
বিভিন্ন কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র কোনো বিদ্যুত উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ এর মাধ্যমে বিদ্যুত খাতে অর্থ লুট করে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের একপাশের সড়কে সরকারের পদত্যাগের ১০ দফা দা্বি আদায় এবং বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপি। ঢাকা ছাড়াও অন্য ৯টি মহানগর ও উপজেলায় একযোগে এই কর্মসূচি হয়।
১০ দফা দাবিতে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে যুগপত আন্দোলন শুরু করেছে এটি তার তৃতীয় কর্মসূচি। গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় যুগপত আন্দোলনে প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল এবং ১১ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি করে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। তবে বিভিন্ন কারণে আজকের এ কর্মসূচিতে ১২ দলীয় জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক গণঅধিকার পরিষদ অংশগ্রহণ করেনি। এছাড়া জামায়াতও আজকের কর্মসূচি পালন করেনি।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের আমিনুল হকের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আ্উয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও আবদুস সালাম আজাদ বক্তব্য রাখেন।
আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, রকিবুল ইসলাম বকুল, মাশুকুর রহমান মাশুক, মীর নেওয়াজ আলী, হুমায়ুন কবির খান, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, সালাউদ্দিন ভুঁইয়া শিশির, ফরিদা ইয়াসমীন, সাইফুল আলম নিরব, আকরামুল হাসান মিন্টু, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, মহানগর বিএনপির নবী উল্লাহ নবী, যুব দলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজিব আহসান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, তাঁতী দলের কাজী মুনীরুজ্জামান মুনীর, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, উলামা দলের মাওলানা আবুল হোসেন, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমূখ।
বিক্ষোভ সমাবেশ উপলক্ষে নয়া পল্টনের আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।