গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই সেখানে। ছিল না কোন বিষেশজ্ঞ চিকিৎসক। অপারেশনের কোন ব্যবস্থাও নেই। শুধু একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নরমাল ডেলিভারি করান সেখানে। ব্যতিক্রমী কোন বিষয় এলে পাঠানো হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এই ধরনের একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জমজ শিশুর জন্ম হলো। সম্পূর্ণ নরমাল ডেলিভারিতে যমজ শিশুর জন্ম দিল নিপা বেগম (২২) নামে এক গৃহিনী। এতে মহিলার ডেলিভারিতে অংশ নেওয়া চিকিৎসক ও সেবিকারা সবাই অবাক।
নোয়াখালী হাতিয়ায় নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মঙ্গলবার ভোরে এই যমজ শিশুর জন্ম হয়। এই যমজ শিশু দুইজনের মা নিপা বেগমের বাড়ী উপজেলার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নরে মদিনা গ্রামে। শিশুদের পিতা হেঞ্জু মাঝি একজন জেলে।
এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার নুর নাহার সোমা জানান, গভীর রাতে নরমাল ব্যাথা দেখা দেওয়ায় নিপা বেগমকে স্বজনরা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসে। অর্থনৈতিক অবস্থা দূর্বল থাকায় এর আগে এই মহিলার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয় নি। এই জন্য নিপা বেগম ও গর্ভে থাকা শিশুর অবস্থান ভালো ভাবে জানা যায়নি। পরে নরমাল ডেলিভারীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। ভোরে নরমাল ডেলিভারী করতে গিয়ে দেখা যায় দুটি বাচ্চা। দুইজন ছেলে। পরিমাপ করে দেখা গেছে তাদের ওজন স্বাভাবিক আছে । মা ও বাচ্ছারা সবাই ভালো আছেন ।
তিনি আরো জানান, সাধারনত যমজ শিশুর নরমাল ডেলিভারী হয় না। এই জন্য অপারেশনের প্রয়োজন হয়। অপারেশনের কোন ব্যবস্থ্য এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ছিল না। সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই ডেলিভারী করানো হয়। দীর্ঘ কর্ম জীবনে নিঝুমদ্বীপের জন্য এটি একটি ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা।
নিপার স্বামী হেঞ্জু মাঝি জানান, তাঁর স্ত্রীর গর্ভে দুটি বাচ্চা ছিল এটা তারা অনুমান করতে পারেনি। নিঝুমদ্বীপ থেকে উপজেলা সদর প্রায় ৪০ কিলোমিটার। মাঝে ছোট একটি নদী পার হতে হয়। এতে উপজেলা সদরে গিয়ে সেবা গ্রহন করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের লোকজনের আন্তরিকতায় খুশি সে।
এব্যাপারে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মেহেদি হাসান বলেন, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মায়েদের ডেলিভারী নিরাপদ করা জন্য হাতিয়ার ১১টি ইউনিয়নে নরমাল ডেলিভারী সেন্টার চালু করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই সেবা চালু করা হয়েছে। এখানে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাথে একজন আয়া, একজন পিয়ন ও একটি পরিপাটি ডেলিভারি রুম তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এক একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মাসে গড়ে ৩০-৪০টি নরমাল ডেলিভারী হয়। আমাদের কর্মীরা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে রাস্তায় ডেলিভারী করানোর ও অভিজ্ঞতা আছে। এসব বিষয়ে সহযোগিতা করছেন ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ থেকে।