মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় শোভাযাত্রা বের করে বিএনপি। এতে ব্যাপক সংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। দুপুর আড়াইটায় এ শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও জুমার নামাজের আগেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে আসতে শুরু করেন। কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেই অবস্থান নেন তারা। অনেকে রং-বেরঙের পোশাক, কেউ কেউ একই রঙের ক্যাপ (টুপি) মাথায় দিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে একটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ থেকে বক্তব্য দেন দলের শীর্ষ নেতারা।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি নয়, ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগই ভায়োলেন্স (সহিংসতা) করে থাকে।
বিএনপি বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য মাঠে নেমেছে-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের সমালোচনা করে ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমরা বিভাগীয় ১০টি সমাবেশে প্রমাণ করেছি, আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। এই ১০টি সমাবেশের কোনো জায়গায় কোনো অরাজকতা কিংবা কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। অথচ প্রধানমন্ত্রী বললেন, আমরা নাকি বিশৃঙ্খলা করার জন্য সমাবেশ করি! আমরা বলব- বিএনপি নয়, ভায়োলেন্স যদি কেউ করে থাকে, আওয়ামী লীগই করেছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছেন। তারা বলেন, আমরা নাকি সন্ত্রাস করতে চাই। সন্ত্রাস যদি এ দেশে কেউ করে থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগই করেছে। আর এই আওয়ামী লীগ আবার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের কোনো উসকানিতে পা দেদিবেন না। সরকার উসকানি দিচ্ছে, মিথ্যাচার করছে এবং ইতিহাস বিকৃত করে কথা বলছেন। তাই সরকারের উসকানিতে আপনারা পা দেবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করব।
বক্তব্য শেষে বিজয় শোভাযাত্রাটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হয়ে কাকরাইল, মালিবাগ ও ফকিরাপুল মোড় ঘুরে আবারও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকেই ব্যানার, ফেস্টুন, ঘোড়ার গাড়ি, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী নয়াপল্টনে উপস্থিত হতে থাকেন। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন ¯েøাগানে রাজপথ মুখরিত করে তোলেন। এক পর্যায়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সড়ক সমাবেশস্থলে রূপ নেয়।
এদিকে বিএনপির বিজয় শোভাযাত্রা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় দলটির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশেপাশের এলাকায়। তবে এসময় অনাকাঙ্খিত কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।
এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম আজাদ, দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সসহ দলটির অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের ব্যাপক সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।