কুমিল্লা, রাজশাহী ও ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ ঘোষিত স্থানেই হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
ঢাকার বিভাগীয় গণ সমাবেশ নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে করার অনুমতি চেয়ে গত সাপ্তাহে বিএনপি ঢাকা মেট্রোপলিটসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দিয়েছে। তবে এখনও অনুমতি দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বিষয়টি স্পষ্ট করতে গিয়ে বলেন, একটা কথা খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, কুমিল্লায় ২৬ নভেম্বর, রাজশাহীতে ৩ ডিসেম্বর এবং ১০ তারিখ ঢাকায়। এই বিভাগীয় সমাবেশগুলো প্রত্যেকটি একই দিনে একই সময়ে ঘোষিত স্থানেই হবে।
তিনি বলেন, সরকারের উচিত হবে যদি ন্যুনতম শুভ বুদ্ধির উদয় হয় এই সমাবেশগুলোতে বাধা প্রদান না করা এবং নিজেদেরকে এভাবে একেবারে হাস্যকর অবস্থায় না নিয়ে যাওয়া। যখন তারা বলেন যে, আমরা সুন্দর ব্যবস্থা করছি, সমাবেশকে সমর্থন করছি, সহযোগিতা করছি তখন লোকে হাসে। মানুষজন তো প্রতিটা খবর রাখে। এখন তো ওই দিন নেই যে, সরকার যা বলে সব বিশ্বাস করতে হবে। এখন সোশ্যাল মিডিয়া দিয়ে মানুষ মুহুর্তের মধ্যে সমস্ত খবর পেয়ে যায়।
বিএনপি মহাসচিব জানান, গত ২২ আগস্ট থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৯৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৪ হাজার ৪১২ জনকে এজহারভুক্ত আসামী করা হয়েছে, ১০ হাজার ৬৬৪জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৪৫জনকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৭টি সমাবেশে জনস্রোত দেখে সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে গোটা দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃস্টি করেছে। যেসব বিভাগে সমাবেশ হয়ে গেছে সেখানে হয়রানি করছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।
বাকী তিনটা সমাবেশে যাতে লোকগম না হয় সেজন্য তারা মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার কৌশল হিসেবে এখন মহানগীরতে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাসী চালানো হচ্ছে। নেতারা কেউ বাসায় থাকতে পারছেন না।
দুই জঙ্গি ছিনতাই প্রসঙ্গ: দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ে ঘটনা ‘আবার সেই জঙ্গি নাটক’ কিনা জনগণের কাছে প্রশ্ন উঠেছে বলে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, স্প্রে করে জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার কী খোঁড়া যুক্তি দেয়া হচ্ছে। জনভিক্টেড জঙ্গিদেরকে নাকি একজন পুলিশ সদস্য নিয়ে আসতেছিলো। এটা কেমন করে হতে পারে? অসম্ভব ব্যাপার।
সেই ক্ষেত্রে জনগনের কাছে প্রশ্ন জেগেছে যে, আবার সেই জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে কিনা। যাতে করে তাদের আবার ক্ষমতায় টিকে থাকা স্থায়ী হতে পারে, কিছুটা সময় পায়। আমরা জনগণের প্রশ্নটাই তুলে ধরলাম। আমরা বিশ্বাস করি এসকল অশুভ চক্রান্ত থেকে সরকার সরে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, আরেকটা শুরু করেছিলো অগ্নি সন্ত্রাস। খুব একটা হালে পানি পায়নি। এটা খুব বেশি নেয়নি মিডিয়া। যে কারণে সেটাকে তারা জোর দিয়ে করতে পারছে না। কিছুদিন হলো জঙ্গি জঙ্গি শুরু করেছে।
বিদ্যুতের মুল্য বৃদ্ধি মরার ওপর খাড়ার ঘা: বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তকে ‘মরার ওপরে খাড়ার ঘা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব। এই মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে জনগনই প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবে বলে হুশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এটা মরার ওপরে খাড়ার ঘা। একদিকে চাল-ডাল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়েই চলেছে। ইনফ্লেশন চরম পর্য়ায়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে, পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে তারা দু:সহ করে করে তুলেছে। আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সরকারকে পরিস্কারভাষায় বলতে চাই, এই দাম যদি না কমানো হয়, বিদ্যুতের দাম যদি আগের জায়গায় না নামায় তাহলে জনগণই তার প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিনের আহবায়ক আবদুস সালাম, দুই সদস্য সচিব আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহŸায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য সচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ দফতর তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।