নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ (যুগপৎ) আন্দোলনের জন্য ৯ দফা খসড়া রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি। সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিএনপির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। রাত ৮টা থেকে প্রায় ১১টা পর্যন্ত বৈঠক চলে। বৈঠকে কমিটির নেতারা আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে একমত হন। তবে নির্বাচনোত্তর জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনে ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী যে বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার চেষ্টা চলছে, এর মূলভিত্তি হচ্ছে এই রূপরেখা। বিএনপি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফা বৈঠকে আওয়ামী লীগের অধীনে জাতীয় নির্বাচন নয়, এ ব্যাপারে নীতিগতভাবে সবাই একমত হয়েছেন। এই ঐকমত্যের ভিত্তিতে এখন আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। এ মাসেই সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু হবে।
এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্য প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন বলেন, রূপরেখার যে খসড়া তৈরি করা হয়েছে, এর ভিত্তিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে।
খসড়া রূপরেখায় ৯ দফা: সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকার, সংসদ বাতিল, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, দুর্নীতি রোধে কমিশন গঠন, গুম হওয়া নেতাকর্মী ও সাধারণ নাগরিককে ফেরত দিতে হবে এবং খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নেতাদের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
বৃহৎ ঐক্যপ্রক্রিয়ার অন্যতম উদ্যোক্তা ও বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন গণমাধ্যমকে বলেন, অনেক দিন ধরেই সরকারবিরোধী সব পক্ষকে নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য করার চেষ্টা চলছে। এ লক্ষ্যে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট এবং ডান ও বামপন্থী ৩৫টি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। সব দলই এ সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে একমত হয়েছে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৃহৎ ঐক্য গড়ে তোলার ব্যাপারে কাজ চলছে। দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত হবে।
মির্জা ফখরুলের এ বক্তব্যের সপ্তাহখানেক পর স্থায়ী কমিটির সভায় খসড়া রূপরেখা চূড়ান্ত হলো। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, স্থায়ী কমিটির খসড়া রূপরেখায় কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে।
এদিকে মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত জানিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় বনানীতে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা এবং নোয়াখালীতে ঢাকায় ফেরার পথে বরকতউল্লা বুলুর ওপর হামলার নিন্দা জানানো হয়। সম্প্রতি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে সভায় বলা হয়, এ ধরনের বক্তব্য সরকারি চাকরিবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।