একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান লেখক, জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মরদেহ শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার দুপুর দুইটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হবে। এর আগে বুধবার দুপুর একটায় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মরদেহ বাংলা একাডেমিতে নেয়া হবে।
অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের ছেলে বর্ষণ ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বুধবার বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে। বর্ষণ জানান, উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের রানাভোলা মহিলা মাদ্রাসা মসজিদ মাঠে মঙ্গলবার বাদ এশা প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মরদেহ রাখা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বেসরকারী একটি হাসপাতালে মারা যান বিশিষ্ট এই নজরুল গবেষক। ফুসফুসের প্রদাহ রোগে ভুগে বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর পেটে ব্যথার কারণে তাকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষার পর তার ফুসফুসে পানি জমার বিষয়টি ধরা পড়ে। তখন থেকে বিএসএমএমইউর বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি মেডিসিন) বিভাগের অধ্যাপক একেএম মোশাররফ হোসেনের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিল।
তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলামকে পরিবারের সদস্যরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যেতে চাইলেও তাতে তিনি সায় দেননি। এর মধ্যে তাকে বিএসএমএমইউ থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা রফিকুল ইসলাম সেই সময়ের দুর্লভ আলোকচিত্রও ধারণ করছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি জাতীয় অধ্যাপক হন। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম শিক্ষা, সাহিত্য ও গবেষণায় অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক পেয়েছেন। ২০২১ সালের ১৮ মে সরকার তাকে ৩ বছরের জন্য বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব দেয়।
প্রধানমন্ত্রীর শোক: জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ তার এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাল, আর তিনি হারালেন একজন অভিভাবককে।
এক শোকবার্তায় তিনি বলেছেন, ‘ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এই প্রত্যক্ষ সাক্ষী যেসব ইতিহাস গ্রন্থিত করেছেন, তা বাংলা সাহিত্যের জন্য অমূল্য সম্পদ। নজরুল গবেষণায় ড. মো. রফিকুল ইসলামের অবদান অনন্য সাধারণ। বিশিষ্ট এই গুণী লেখক ও গবেষকের সাহিত্য কর্ম বাঙালি জাতিকে সবসময়ই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে। তিনি মনেপ্রাণে জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ ও লালন করতেন এবং মুজিববর্ষের নানা আয়োজন সফল করতে দক্ষতার সঙ্গে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। বাংলা সাহিত্য ও গবেষণায় তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকবেন।