রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণ আপাতত বন্ধ হলেও তিনি চরম ঝুঁকিতে আছেন বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা। এজন্য পুনরায় রক্তক্ষরণের আগেই খুব দ্রুত তাকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানির বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানোর সুপারিশ করেছেন তারা।
রোববার সন্ধ্যায় গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি, তার (খালেদার) যদি পুনরায় পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে সেটা বন্ধ করার মতো সাপোর্টিং টেকনোলজি আমাদের এখানে নেই। সেক্ষেত্রে উনার রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।
এ সময় ডা. শামসুল আরেফিন বলেন, আমাদের বডিতে দুটি সার্কুলেশন সিস্টেম আছে। একটা হলো পোর্টাল সার্কুলেশন সিস্টেম, আরেকটা সিস্টেমিক সার্কুলেশন সিস্টেম। লিভারে দুটা সিস্টেমই কার্যকর। লিভারে টোটাল যে ব্লাডটা যায়, তার তিন ভাগের এক ভাগ যায় সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে। আর তিন ভাগের দুই ভাগ যায় পোর্টাল সার্কুলেশন থেকে।
তিনি আরও বলেন, এখানে যেটা হয়, তার পোর্টাল প্রেসার বেড়ে গেছে। কারণ তার লিভারের ভেতরের নরমাল চ্যানেলগুরো লিভার সিরোটিক প্রোসেসে ডিস্ট্রয় হয়েছে। যে কারণে পোর্টাল প্রেসার বেড়ে যায, সেজন্য যেসব ভেন থাকে খাদ্যনালিতে, সেগুলো ফুসে ওঠে এবং ফেটে যায়। সেজন্য সিভিআর ব্লিডিং হয়। এই সিচুয়েশনে আমরা যেটা করেছি সেটা ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস। এটার পরে আবার ব্লিডিং হলে আরও কিছু জিনিস আছে, যেগুলো আমরা করি স্পেশাল কিছু কেমিক্যাল এজেন্ট আছে, সেগুলো ইনজেক্ট করি অনেক সময়। আনফরচুনেটলি সেটা আমাদের দ্বারা সম্ভব হয়নি এবং এখন আমাদের দেশে সেই ওষুধগুলো পাওয়া যায় না।
চিকিৎসক বলেন, তৃতীয়ত যেটা আছে, সেটা হলো সার্বজনিন। সেটা হলো টিপস। লিভারের ভেতরে টোটাল প্রেসার কমানোর জন্য সিস্টেমিক সার্কুলেশন এবং পোর্টাল সার্কুলেশনের মধ্যে একটা কমিউনকেশন করে দেওয়া। এটা একটা হাইলি টেকনিক্যাল কাজ। এটা সচরাচর হয় না। আমাদের দেশে আমি দেখিনি কোনো টিপস করা রোগী এসেছে। যারা আমরা রোগীদের ডিল করি তাদের দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার ব্লিডিং হলে রোগীদের সার্ভাইভ করা কঠিন। সেজন্য এ সেন্টারগুলো মেইনলি আমেরিকা ও ইউরোপ বেজড। স্পেশালি ইউকে-জার্মানি এবং ইউএসএ। এখানে এগুলোর জন্য অ্যাডভান্স সেন্টার আছে। তারা সেখানে করে। তবে সেসব দেশেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই। দু-চারটা সেন্টার আছে। বিশ্বের সব রোগীরা সেসব সেন্টারে যায়। সেই সেন্টারের পুরো সেটাপ এখানে আনা সম্ভব নয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, এ পর্যন্ত তিনবার রক্তক্ষরণ হয়েছে খালেদা জিয়ার। আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় যতটা সম্ভব রক্তক্ষরণ এখন বন্ধ থাকলেও যে কোন সময় ফের তা হতে পারে। এ অবস্থায় আমরা তার চিকিৎসা নিয়ে সম্পূর্ণ অসহায়। তার এমনিতেই হার্ট, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ নানা সমস্যা আছে। এত সমস্যার মধ্যে আমরা তার রক্তক্ষরণজনিত সমস্যার সমাধান করব কীভাবে। আমরা এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং তার নিকটাত্মীয়দের কাছে বলেছি। এখনও সময় আছে, তিনি স্টেবল আছেন। কিন্তু এমন সময় আসতে পারে যে, তাকে শিফট করাটাও কঠিন হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আরও চার মাস আগে যদি ম্যাডাম বিদেশে যেতে পারতেন তাহলে হয়তো তার বিøডিং হতো না। এখন উনি হাই রিস্কে আছেন। আবার বিøডিং হতে পারে। এর আগেই তাকে বিদেশের টিপস সেন্টারে নেয়ার প্রসেস করতে হবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, প্রফেসর ডা. এ কিউ এম মহসিন, প্রফেসর ডা. নূর উদ্দিন, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎক ডা. আল মামুন।
খালেদা জিয়া গত ১৩ নভেম্বর থেকে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
এর আগে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ২৬ দিন চিকিৎসা শেষে গত ৭ নভেম্বর গুলশানের বাসায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে আবার তাকে হাসপাতালে নিতে হয়। দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়া খালেদা জিয়া সরকারি আদেশে মুক্ত থাকার মধ্যে এখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন।
তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে চায় বিএনপি ও পরিবার। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।