বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়। পরে এনজিওগ্রাম করে ধরা পড়ে ব্লক। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকরা তার হার্টের ব্লক অপসারণ করে একটি রিং বসিয়ে দেন।
শনিবার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে এনজিওগ্রামের মাধ্যমে হার্টের ব্লক ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসকরা সেখানে রিং বসান। বর্তমানে তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল না হলেও স্থিতিশীল নয় বলে ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এর আগে হঠাৎ বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শুক্রবার শেষ রাতে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে সিসিইউতে ভর্তি করে চিকিৎসার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। এদিকে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য ফের বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মেডিকেল বোর্ড।
শনিবার বিকালে দলের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়ার মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত রাতে (শুক্রবার) হাসপাতালে ভর্তির পর খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। পরে তাঁর জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা এনজিওগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেন। বেলা একটার দিকে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, এনজিওগ্রাম করতে গিয়ে দেখা গেছে যে, তার (বেগম খালেদা জিয়া) মেইন আর্টারিটায় ৯৯% বøক এবং সেটা চিকিৎসকরা সফলভাবে স্টেইট করেছেন, বেলুনিং করে বøক দূর করে সেখানে তারা স্টেইন বসিয়েছেন। ডাক্তাররা অত্যন্ত আশাবাদী যে, তার এই টিট্রমেন্টের ফলে তিনি আপাতত হার্টের যে সমস্যা যেটা থেকে সাময়িকভাবে রিলিফড হবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বহুবার দেশনেত্রীর চিকিৎসার ব্যাপারে কথা বলেছি। দলের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য আমরা আন্দোলন করেছি, তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বাইরে পাঠানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, তার পরিবারের সদস্যরা একসময় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখাও করেছেন। কিন্তু এই সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী আজ পর্যন্ত তার চিকিৎসার জন্য তাকে যে বিদেশে পাঠানো দরকার সেটা বিষয়টাকে সম্পূর্ণ বাতিল করে দিয়ে যে ব্যবস্থাটা বলেন সেটা সঠিক নয়।
আজকে তার এই অসুস্থতা প্রমাণিত হলো তাকে অবিলম্বে অবিলম্বে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়ে তার উন্নত চিকিতসার ব্যবস্থা করতে না পারলে তার জীবন হুমকির মুখে পড়বে এবং পড়েছে বার বার। আজকে আপনাদের (গণমাধ্যম) সামনে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সামনে আবার আহবান জানাতে চাই, এই সরকারের কাছে অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি এদেশের জনগণের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দুই বারের বিরোধী দলের নেতা, এদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যার অপরিসীম অবদান রয়েছে তার জীবন রক্ষার জন্য, তার স্বাস্থ্যের জন্য তাকে বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিন।
তিনি বলেন, অন্যথায় সকল দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। আমি আশা করি আপনাদের মাধ্যমে এই বার্তা তাদের (সরকার) কর্ণ কহুরে প্রবেশ করবে এবং তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মহাসচিব জানান, খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড বলেছেন যে, ম্যাডামের একটা মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তারপরে উনার হাসপাতালে থাকতে থাকতে আরেকটা উপসর্গ এসে যায় সেটা হচ্ছে সাবোকেশন শুরু, শ্বাস-কষ্ট শুরু হয়। তখন বোর্ড অতিদ্রæত এনজিওগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড।
এরপর দুপুর ১টায় খালেদা জিয়াকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। দেড় ঘন্টা পর তাকে সিসিইউ‘র কেবিনে নিয়ে আসা হয়।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিতসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোমিন-উজ জামান ও অধ্যাপক সামস মনোয়ারও রয়েছেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় বসুন্ধরা এভারকেয়ার হাসপাতালে মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ অবস্থা এবং তার হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেন বিশেষ চিকিৎসকরা।
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ম্যাডামের হার্টের অসুখ। এটা লাইফ থ্রেটেনিং। এটা আজকে সাময়িকভাবে চিকিতসকরা সমাধান দিতে সক্ষম হয়েছেন। তবে তার যেসব অন্যান্য রোগ রয়েছে সেটার চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, সেটা দেশের বাইরে উন্নত কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা দরকার। ডাক্তাররা আগেও বলেছেন আজকেও যে মেডিকেল বোর্ড বসেছে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ম্যাডামকে বিদেশে উন্নত টিট্রমেন্টের জন্য পাঠানোর সাজেস্ট করেছেন।
বিএনপি দলের চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখন সরকারের কাছে আপনাদের মাধ্যমে আহবান জানিয়েছি। দল থেকে সিদ্ধান্ত এখনো নেইনি। অবশ্যই আমরা নেবো।
তবে এটা জনগনের দাবি, গোটা বাংলাদেশের মানুষের দাবি যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার জীবন রক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো হোক এবং মুক্তি দিয়ে তাকে উন্নত চিকিতসার জন্য বিদেশে পাঠানো হোক।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।