অবশেষে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে তিন সদস্যের প্যানেল মেয়র গঠন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। প্যানেলের প্রধান হিসেবে আছেন ৪৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন। অন্য সদস্যরা হলেন কাউন্সিলর আব্দুল আলিম ও আয়শা আক্তার। একইসঙ্গে আলোচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বাহিষ্কার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এ প্যানেল মেয়র গঠনের ঘোষণা দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এ বিষয়ে বিকাল ৪ টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবেন মন্ত্রী। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
গত শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে বহিষ্কার করা হয়।
জানা গেছে, মেয়র জাহাঙ্গীর তার একক ক্ষমতা ধরে রাখতে এতদিন কোন প্যানেল মেয়র গঠন করেননি। যে কারণে তার বাহিষ্কারের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার এ প্যানেল মেয়র গঠন করতে হলো।
সূত্রমতে, সম্প্রতি জাহাঙ্গীরের বিতর্কিত বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।
ওই ঘটনায় গাজীপুরের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ নিয়ে গাজীপুরে মেয়র-সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে কয়েক দফা। ৩ অক্টোবর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ১৮ অক্টোবরের মধ্যে জাহাঙ্গীরকে এর জবাব দিতে বলা হয়। তিনি জবাবও দেন। সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর তাকে দলের সব পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে ভিডিওর জের ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের সম্পর্ক কার্যত ছিন্ন হয়ে যায়। গাজীপুরে সরকারি নানা কার্যক্রমে জাহাঙ্গীর আলমকে প্রকারান্তরে এড়িয়ে চলার ঘটনাও ঘটতে থাকে। তার উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে অনড় থাকেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
জাহাঙ্গীর আলম ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও স্থান পান। এরপর গাজীপুরের সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র হন তিনি। এরপর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পান মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নগরবাসীর রয়েছে নানা অভিযোগ। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক প্রশস্তকরণের নামে হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি এবং স্থাপনা ভেঙে দেন তিনি। এসব স্থাপনার ক্ষতিপূরণ এবং জমির মূল্য তিনি পরিশোধ করেননি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন নগরের হাজার হাজার মানুষ। এ নিয়ে তার ওপর নগরবাসীর রয়েছে চাপা ক্ষোভ।
বহিস্কারের পর শনিবার দুপুরে জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর থেকে তিনি বাড়িতেই অবস্থান করছেন। এমনকি তিনি সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ে অফিসেও যাননি।