সম্প্রতি সরকারি পাঁচ ব্যাংকে সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় নাম আসায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগের অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরকে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে গতকাল রোববার বুয়েটের সিনিয়র শিক্ষকদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। গতকাল রাতে বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ ব্যাংক কর্মকর্তা ও আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদে বুয়েটের শিক্ষক নিখিলসহ বেশ কয়েকজনের নাম আসে। নিখিলের একটি ব্যাংক হিসাবে ১০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন পাওয়া গেছে।
৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) পদে নিয়োগের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় এ পর্যন্ত জনতা, রূপালী ও পূবালী ব্যাংকের পাঁচ ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরই মধ্যে পাঁচ ব্যাংক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একইভাবে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনিশিয়ান মোক্তারুজ্জামান রয়েল, অফিস সহায়ক দেলোয়ার ও পারভেজকেও সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গ্রেপ্তার হওয়া ১১ জনের মধ্যে ছয়জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে আহছানউল্লার অফিস সহায়ক দেলোয়ার হোসেন, পারভেজ মিয়া ও প্রেসকর্মী রবিউল আউয়ালের জবানবন্দিতে বুয়েটের অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের নাম আসে।
দেলোয়ার জবানবন্দিতে বলেন, নিখিল রঞ্জন ধর প্রতিবার প্রেস থেকে দুই সেট প্রশ্ন ব্যাগে করে নিয়ে যেতেন। তাঁর মাধ্যমেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়োগ পরীক্ষার দরপত্র পেয়েছে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন নিখিল। জবানবন্দিতে আহছানউল্লার কর্মকর্তা শরীফুল ও দেলোয়ারের ভগ্নিপতি মুবিনউদ্দিনের নামও এসেছে।
গ্রেপ্তার দেলোয়ারের সঙ্গে নিখিল রঞ্জনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। প্রশ্ন প্রণয়ন কমিটিতে যুক্ত না থাকলেও প্রশ্ন ছাপার সময় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছাপাখানায় অবস্থান করেন নিখিল।
তবে বুয়েটের শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধর তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি পদ থেকে অব্যাহতি প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে চিঠি পাননি।
জানতে চাইলে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বের পাশাপাশি বুয়েটের সব পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সিনিয়র পাঁচ শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এতে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।