চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান জানিয়েছেন, মাতারবাড়ী হবে ভবিষ্যতের সাব রিজিওনাল হাব। ফলে বর্তমানে কলম্বো, সিঙ্গাপুর ও পোর্ট কেলাংয়ের ওপর এখন যে নির্ভরশীলতা সেটি আর থাকবে না। এখন বিদেশের সঙ্গে সরাসরি চালু হওয়া সার্ভিস আগামীতে মাতারবাড়ী থেকে যাবে। আবার বিদেশ থেকে ১২ হাজার টিইইউস কনটেইনার নিয়ে যখন মাতারবাড়ীতে আসবে, সেখান থেকেই ব্যবসার আরেক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এছাড়া তখন দেশের অন্য বন্দরগুলো সার্ভিস পোর্ট হিসেবে কাজ করবে।
রোববার চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান তিনি। সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বন্দর দিবস উপলক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য (অর্থ) কামরুল আমিন, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হলো মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট ও বে-টার্মিনাল প্রকল্প। এর মধ্যে বে-টার্মিনাল এবং কক্সবাজার জেলায় মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্টের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান সক্ষমতা প্রায় তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাবে। গত ৩০ মার্চ মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ২৮৩ দশমিক ২৭ একর জমি কক্সবাজার জেলা প্রশাষন বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে। বন্দর নির্মাণকাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষ্যে সহসা দরপত্র আহ্বান করা হবে। মাতারবাড়ী টার্মিনাল হলে ১৬ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। অন্যদিকে বে-টার্মিনাল প্রকল্পাধীন ৬৭ একর ব্যক্তিমালিকানার জমির দলিল ২০২১ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বন্দরকে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আরো ৮০৩ একর জমি প্রতীকী মূল্যে বন্দরের অনুকূলে বরাদ্দ দিতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।
বছরে সাড়ে চার লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) নির্মাণকাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, ১ হাজার ২২৫ মিটার ও ৮০০ দীর্ঘ দুটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর চেয়ারম্যান লিখিত বক্তব্যে বলেন, বন্দরে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং, জাহাজ আসার সংখ্যায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বন্দরে নেই জাহাজ বা কনটেইনার জট; দ্রুত খালাস হচ্ছে পণ্য। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে শিগগিরই ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে । বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গত এক দশকে ৫ লাখ ৮০ হাজার বর্গমিটার ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৫৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং এলাকায় ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড এবং সদরঘাট এলাকায় একটি ৭৫ মিটার লাইটারেজ জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর আগে নির্মিত ৪০০ মিটার লাইটারেজ জেটি ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সচল করা হয়েছে। ফলে লাইটার জাহাজগুলো দ্রুত সময়ে কার্গো খালাস করায় ওয়েটিং টাইম কমেছে।