এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর কুমিল্লা শহরের ৩ টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় ২৬.৬৭ কোটি টাকার গোপনকৃত বিক্রয় হিসাব উদঘাটন করেছে। এতে সরকারের প্রায় ৪ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার ভ্যাট ফাঁকি সংঘটিত হয়েছে।
এদের একটি হলো কিষোয়ান স্নাকস্ লিঃ প্রতিষ্ঠানটি ভাটপাড়া, ধনপুর, সোয়াগাজী, কুমিল্লায় অবস্থিত; এর মূসক নিবন্ধন নম্বর-০০০২৯৮৭১৩-০৬০১। দ্বিতীয়টি হলো বনফুল এন্ড কোং প্রতিষ্ঠানটির কারখানা ভাটপাড়া, সদর দক্ষিণ, কুমিল্লায় অবিস্থত; এর মূসক নিবন্ধন নম্বর-০০০১৭১৩২২-০৬০১। অন্যটি হলো ফরিদ ফাইভার এন্ড উইভিং লিঃ প্রতিষ্ঠানটি প্লট নং-বি/১৯, বিসিক শিল্পনগরী, কুমিল্লায় অবস্থিত; এর মূসক নিবন্ধন নম্বর-০০০০৭১০১২-০৬০১।
কিষোয়ান স্নাকস্ লিঃ ও বনফুল এন্ড কোং প্রতিষ্ঠান দুটি মিষ্টি ও বেকারী পণ্য উৎপাদন করে সারা দেশে সরবরাহ করে এবং একই মালিকানাধীন। এছাড়া ফরিদ ফাইভার এন্ড উইভিং প্রতিষ্ঠানটি সামুদ্রিক জাল ও রশ্মি উৎপাদন করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীনের নেতৃত্বে একটি দল গত ১৭ জানুয়ারি ৩টি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে। এতে ভ্যাট গোয়েন্দারা ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির আলামত সংগ্রহ করেন।
অভিযানের শুরুতে কর্মকর্তাগণ প্রতিষ্ঠানের মূসক সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি প্রদর্শনের অনুরোধ করা হলে প্রতিষ্ঠান কর্তপক্ষ মূসক সংক্রান্ত নথিপত্র প্রদর্শন করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কম্পিউটাসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক দলিলাদি তল্লাশিপূর্বক বাণিজ্যিক বিক্রয় চালান এবং বিক্রয় রেজিস্টার জব্দ করা হয়।
ভ্যাট গোয়েন্দার তদন্তে কিষোয়ান স্নাকস্ লিঃ প্রতিষ্ঠানটির জানুয়ারি/২০১৮-ডিসেম্বর/২০২০ মেয়াদে ৫% হারে পণ্যের অপ্রদর্শিত বিক্রয়ের মূসক আরোপযোগ্য মূল্য ছিল ১৪,৭৬,০১,০২৯ টাকা, যার উপর প্রযোজ্য মূসক ৭৩,৮০,০৫২ টাকা। এছাড়া ১৫% হারে পণ্যের অপ্রদর্শিত বিক্রয়ের মূসক আরোপযোগ্য মূল্য ৫,৮২,৮৮,৮৩৪ টাকা, যার উপর প্রযোজ্য মূসক ৮৭,৪৩,৩২৫ টাকা। তদন্ত মেয়াদে সর্বমোট অপ্রদর্শিত মূসক ১,৬১,২৩,৩৭৬ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২% হারে ৯৭,২৯,৩৩৭ সুদ টাকা প্রযোজ্য।
তাছাড়া বনফুল এন্ড কোং প্রতিষ্ঠানটির জানুয়ারি/২১-ডিসেম্বর/২১ মেয়াদে জব্দকৃত দলিলাদি অনুযায়ী বিক্রয় পাওয়া যায় ৬,৫০,৯০,৬৫৪ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৩,৩১,২৮,৬২৫ টাকা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে।এক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৩,১৯,৬২,০২৯ টাকা কম বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করে, যার উপর প্রযোজ্য মূসক ৪১,৬৮,৯৬০ টাকা।এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২% হারে ২,৮৩,৭১৬ সুদ টাকা প্রযোজ্য।
এছাড়া ফরিদ ফাইভার এন্ড উইভিং লিঃ প্রতিষ্ঠানটির জানুয়ারি/২০-ডিসেম্বর/২১ মেয়াদে জব্দকৃত দলিলাদি অনুযায়ী বিক্রয় পাওয়া যায় ৩৯,৭০,৬৭,৬২১ টাকা।কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৩১,৮৭,২৭,৩৪৬ টাকা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৭,৮৩,৪০,২৭৫ টাকা কম বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করে, যার উপর প্রযোজ্য মূসক ১,০২,১৮,২৯৭ টাকা।এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২% হারে ৯,৭৯,৯৫৩ সুদ টাকা প্রযোজ্য।
এই ৩টি প্রতিষ্ঠানে মোট মূসক বাবদ ৩,০৫,১০,৬৩৩ টাকা এবং সুদবাবদ ১,০৯,৯৩,০০৬ টাকাসহ সর্বমোট ৪,১৫,০৩,৬৩৯ টাকার ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে।
অভিযানে প্রাপ্ত কাগজ-পত্র ও অন্যান্য তথ্যাদি যাচাই করে ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদি পাওয়া যায়। দীর্ঘ ৩ মাস তদন্ত করে প্রতিষ্ঠান ৩টির বিরুদ্ধে আজ ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তদন্তে উদঘাটিত পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে মামলা ৩টি সংশ্লিষ্ট কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট প্রেরণ করা হয়েছে। একইসাথে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরো মনিটরিং করার জন্যও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।